এ যেন একেবারে উলট পুরাণ। দুবাইয়ের মাকতুম বিন রশিদ মাকতুম স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে অসংখ্য নীল রঙের ফুল ফোটালেন ইগর স্টিমাচের দলের একঝাঁক তরুণ। যে ওমানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে দু'টি ম্যাচেই সুনীল ছেত্রীরা হেরেছিলেন, সেই শক্তিশালী ওমানকেই দুবাইয়ে গিয়ে আটকে দিলেন ইগর স্টিমাচের তরুণ ব্রিগেড। ড্র হলেও এটা নিঃসন্দেহে ভারতের নৈতিক জয়!
হোক না প্রদর্শনী ম্যাচ। সেই ম্যাচেও সাফল্য পাওয়াটা কী কম কথা নাকি! বিশেষত এই দলের দশ জন ফুটবলারের বৃহস্পতিবার অভিষেক হয়েছে। কেউ কেউ প্রথম একাদশে শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার পরিবর্তে নেমেছেন। সেই টিমের বিরুদ্ধেই কিনা নাকানিচোবানি খেল ওমান!
প্রথমার্ধে অবশ্য বলের দখল রেখেছিল ওমানই। এমন কী ম্যাচের ৪৩ মিনিটে অমরিন্দর সিং-এর আত্মঘাতী গোলে এগিয়েও যায় ওমান। তবে বিরতিতে স্টিমারদের ভোক্যাল টনিক যেন ওষুধের মতে কাজ করে। দ্বিতীয়ার্ধে পুরো বডিল্যাঙ্গোয়েজই বদলে যায় ভারতের। ৫৫ মিনিটে মনবীর সিং-এর অসাধারণ গোলে সমতা ফেরায় ভারত। তার পর অবশ্য গোলের মুখ খুলতে পারেনি কোনও দলই।
এ দিন অমরিন্দর আত্মঘাতী গোল করে ফেললেও, গোটা ম্যাচে যে ভাবে তিনি ভারতীয় রক্ষণের প্রাচীর হয়ে উঠেছিলেন, বিশেষত দ্বিতীয়ার্ধে, তাতে তাঁকে বাহবা দিতেই হবে। শুধু মাত্র কয়েকটি ভাল গোল বাঁচানোই নয়, পেনাল্টিও বাঁচিয়েছেন অমরিন্দর। গোটা ম্যাচে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সে ৪৩ মিনিটে করা একটি ভুলকে একেবারে ছাপিয়ে গিয়েছে। তবু আত্মঘাতী গোল নিয়ে তাঁর আফসোস কমছে না।
স্টিমাচ অবশ্য দলের পারফরম্যান্সে খুবই খুশি। বলে দিয়েছেন, ‘এই রেজাল্টে আমি খুবই খুশি।’ এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে পুরো টিম খুব ভাল ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওরা নিজেদের সেরাটা দিয়েছে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এ দিন দশ জন ফুটবলারের অভিষেক হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ আগে নেমেছে, কেউ পরে। কিন্তু তারা প্রত্যেকেই লড়াই করে ওমানের থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে। স্বভাবতই আমি খুব খুশি।’
তবে প্রথমার্ধে ফুটবলারদের পারফরম্যান্স চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল স্টিমাচকে। তিনি বলছিলেনও, ‘সত্যি কথা বলতে প্রথম ৪৫ মিনিটের পর আমি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। বিরতিতে আমি ফুটবলারদের বললাম, আমরা ওমানের উপর চাপ তৈরি করতে পারছি না। ওরা যখন খেলা তৈরি করছে, তখন আমরা ওদের কাছেই পৌঁছতে পারছি না। এতে ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে আর আমাদের কমছে। ফুটবলাদের আরও বললাম, তোমরা ঝাঁপিয়ে পড়ো, নিজের সেরাটা দিয়ে টিম হিসেবে খেলো।’ কোচের এই দাওয়াই বিরতির পর ম্যাচের ছন্দই বদলে দিল। যার নিট ফল, অন্য এক সাফল্যের গল্প লিখল স্টিমাচের ছেলেরা। আর এই তরুণ ব্রিগেডের হাত ধরেই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল ভারতীয় ফুটবল।