তিতাসের সাফল্যে গর্বিত গোটা হুগলি, সংবর্ধনায় ভাসছে চুঁচুড়ার সাধু পরিবার

এই সাফল্যের পরেই মঙ্গলবার সংবর্ধনায় ভেসে গেল তিতাসের পরিবার। চার ওভার বল করে মাত্র ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হয় তিতাস। এই খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ভিড় চুঁচুড়া আর এল সাধু রোড এলাকায়।

সংবর্ধনায় ভাসছে চুঁচুড়ার সাধু পরিবার (ছবি-BCCI Women Twitter)

মহিলাদের ক্রিকেটে এই প্ৰথমবার ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর আগে ওয়ানডে এবং টি২০ ফরম্যাটে সিনিয়র পর্যায়ে ভারত তিনবার ফাইনালে উঠেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। ২০০৫ এবং ২০১৭-য় মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত ফাইনালে উঠেও রানার্স হয়। ২০২০-তে ভারত টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেও শেষপর্যন্ত আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার হজম করেছিল। এদিকে কয়েকদিন আগেই মহিলাদের আইপিএল সাড়ম্বরে ঘোষণা করেছে। সেই আইপিএল ঘোষণার সঙ্গেই সঙ্গতি রেখে এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনিদের কীর্তি স্পর্শ করে অনুর্দ্ধ-১৯ ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল মহিলাদের যুব টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেরার সেরা মুকুট পড়লেন জাতীয় যুব দলের মহিলা তারকারা। ফাইনালে ভারতের জয়ের পুরো কৃতিত্বই প্রাপ্য বোলারদের। আর এই জয়ের পিছনে যেই বোলারের সব থেকে বড় হাত রয়েছে তিনি হলেন বাংলার তিতাস সাধু। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট। প্ৰথম বাঙালি ক্রিকেটার হিসেবে কোনও বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন।

এই সাফল্যের পরেই মঙ্গলবার সংবর্ধনায় ভেসে গেল তিতাসের পরিবার। রবিবার শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতেছেন ভারতের মেয়েরা। ফাইনাল খেলায় চুঁচুড়ার তিতাসের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে মুখ্য থুবড়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড দল। চার ওভার বল করে মাত্র ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ হয় তিতাস। এই খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ভিড় চুঁচুড়া আর এল সাধু রোড এলাকায়। বাংলার গর্ব তিতাস, ঋষিতা রিচাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জেলার মেয়ের সাফল্যে স্বভাবতই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে হুগলির চুঁচড়া। তিতাস এখনও সাউথ আফ্রিকায়, সোমবার সকাল থেকেই সাধু বাড়িতে ছিল শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়। রাতে তিতাসের বাড়িতে পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগীর শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন চুঁচুড়ার আই সি অনুপম চক্রবর্তী। মঙ্গলবার সকালে তিতাস সাধুর বাড়িতে যান ধনিয়াখালীর বিধায়ক প্রাক্তন মন্ত্রী অসীমা পাত্র, চাঁপদানীর বিধায়ক তথা তৃৃণমূল জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার, হুগলি জেলা মহিলা তৃণমূল সভানেত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায়, বঙ্গ জননী সভানেত্রী মৌসুমী বসু চ্যাটার্জি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী, চুঁচুড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখার্জি প্রমুখ। শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন জেলা যুব তৃণমূল সভানেত্রী রুনা খাতুন। সকলেই তিতাসের বাবা রনদীপ মা ভ্রমরের সঙ্গে কথা বলেন। জানান মেয়ের সাফল্যে গর্বিত গোটা হুগলি জেলা।

তিতাসের বাবা রনদীপ বলেন, ‘যাঁরা চুঁচুড়া মাঠে বা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা সকলেই জানেন তিতাস কী কঠিন পরিশ্রম করেছে। সেই পরিশ্রমের ফলও পেয়েছে। তাই প্রত্যাশাও বেড়েছে। তাই আগামী দিন আরও কঠিন, তাই ক্রমাগত পরিশ্রম করে যেতে হবে। খেলোয়ারদের জীবন এরকমই হয়। একদিন ছয় মারে, একদিন শূন্য রানে আউট হয়। তাই ভাল সময়ে যেমন সবাই পাশে রয়েছেন, খারাপ সময়েও যেনও পাশে থাকেন সেটাই তিনি প্রত্যাশা করেন।’ তিতাসের মা ভ্রমর সাধু বলেন, ‘তিতাসের সাফল্যে তিনি খুশি। তবে এটা সবে শুরু করেছে। আগমীতে এখনও অনেক পথ চলা বাকি।’ তিনি চান মাটিতে থেকে যেন মেয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারে। এদিন অসীমা পাত্র বলেন, ‘তিতাস শুধু হুগলি জেলা নয়, রাজ্য তথা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে তাঁর বাবা মায়ের অবদান সব থেকে বেশি। তিতাস এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। তাই তাঁর বাবা-মাকে আমরা শুভেচ্ছা জানালাম। পরে তিতাস ফিরলে আবার তাঁকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’