১৮ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্থ ছিলেন অ্যান, বন্ধ ছিল কথাবার্তাও। এবার সেই অ্যান পেলেন কথা বলার সুযোগ। কিন্তু কোনও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে নয়। ইনফরমেশন টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত! কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ এআই-এর সাহায্যে ওই মহিলার ডিজিটাল সংস্করণ কথা বলল সবাইকে অবাক করে দিয়ে। মনের ভাব, কথাগুলো কিন্তু রক্তমাংসের মানুষেরই। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে তা সম্ভব হল? এই প্রযুক্তি অনুসারে তার মস্তিষ্কের সংকেতগুলি বক্তৃতায় রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে এবং চোখমুখের অভিব্যক্তিও সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করা হয়েছে।
৪৭ বছরের অ্যান ১৮ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে ব্রেনস্টেম স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার পর থেকে গুরুতর ভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি কথা বলতে বা, টাইপ করতে পারতেন না। সাধারণত মুভমেন্ট ট্রাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ১৪ টি শব্দ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারতেন। বর্তমানে এই অবতার প্রযুক্তির সাহায্যে সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠেছেন। অবতার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভবিষ্যতে একজন পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন অ্যান।
কিন্তু কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি? আসুন জেনে নেওয়া যাক। ২৫৩ ইলেক্ট্রোডের একটি কাগজের মতো পাতলা আয়তক্ষেত্রাকার অংশ রোগীর মস্তিষ্কে বসানো হয়। এটি মস্তিষ্কের কার্যকলাপের বৈদ্যুতিক রূপান্তর ঘটায়। এর ফলে বক্তৃতা বা মুখের নড়াচড়া ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়। এই সংকেতগুলি সরাসরি একটি ডিজিটাল অবতারের বক্তৃতা এবং মুখের অভিব্যক্তিতে অনুবাদ করা হয়, এর ফলে সেই ব্যক্তির হাসি, দুঃখ, বিস্ময় সমস্ত অনুভূতিই বোঝা ও প্রকাশ করা সম্ভব হয়।
যন্ত্রটি ইমপ্লান্টেশনের পরে খুব সহজ হয়নি বিষয়টি ধারণ করে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় কথা বলা। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড চাং, যিনি এই কাজটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি জানান, ‘আমাদের লক্ষ্য হল যোগাযোগের একটি সম্পূর্ণ এবং মূর্ত উপায় পুনরুদ্ধার করা, যার ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিও অন্যের সাথে কথা বলতে সক্ষম হবেন।’ সাম্প্রতিক অগ্রগতি এই সমস্যার বাস্তব সমাধানের অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু এই ফলাফল কতটা সঠিক? একটি পরীক্ষা চালানোর সময় ৫০০টিরও বেশি বাক্যাংশ পরীক্ষা করে দেখা গেছে ২৮ শতাংশ শব্দ সঠিকভাবে ডিকোড করা যায়নি। স্বাভাবিক কথোপকথনের সময় মিনিটে ১১০ থেকে ১৫০টি শব্দ বলতে পারে মানুষ, তবে এই সিস্টেমটি প্রতি মিনিটে ৭৮টি শব্দ ডিকোড করে উপস্থাপন করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে, এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও এই অগ্রগতি আগামীতে পক্ষাঘাতগ্রস্থ মানুষদের জন্য সুখবর আনতে চলেছে।