AI-ই ভবিষ্যত। ChatGPT-ই তার প্রমাণ। নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট নিয়ে এমনটাই বলছেন সকলে। বুধবার OpenAI নামের এক সংস্থা তাদের নয়া AI চ্যাটবট ChatGPT-র লঞ্চ করে। আর তার নির্ভুলভাবে উত্তর দেওয়ার ক্ষমতায় চক্ষু চড়কগাছ নেট দুনিয়ার। এ যেন আদতে কোনও মানুষই আপনাকে উত্তর দিচ্ছেন। এমনই এক 'মানুষ' যিনি আপনাকে মজার জোক-ও শোনাতে পারবেন, আবার জটিল অঙ্কেরও সমাধান করে দেবেন। লিখে দেবেন পাতার পর পাতা রচনা। তা পড়ে কারও বোঝার সাধ্যি নেই যে সেটি আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের লেখা। গোটা বিষয়টি যেমন মজার, তেমনই শঙ্কারও বটে। অনেকে বলছেন, এমন AI আগামিদিনে বহু কর্মীর কাজ খেয়ে নেবে। এমনকি গুগল সার্চের বদলেও এমন AI সার্চের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়ে যাবে।
ChatGPT-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে লগ ইন করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই এটি যে কেউ ব্যবহার করতে পারবেন। গুগলে ChatGPT লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। আরও পড়ুন: Duplicate Driving License: কীভাবে ডুপ্লিকেট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন? রইল একেবারে সহজ উপায়
ChatGPT
GPT-3.5 নামের এক ল্যাঙ্গোয়েজ মডেলের উপর ভিত্তি করে এই ChatGPT তৈরি করা হয়েছে। এটি 'ডিপ লার্নিং' ব্যবহার করে ঠিক মানুষের মতো করে টেক্সট লিখতে পারে।
ChatGPT-র লেখা দেখে আপনি ধরতেই পারবেন না যে সেটি মানুষের লেখা নয়। আবেগঘন ভাষা থেকে একেবারে নতুন কোনও কবিতা, নির্দেশমাফিক নিমেষে লিখে দিতে পারে এই এআই। এক সবচেয়ে বড় ফিচার হল এর স্মৃতিশক্তি। একজন মানুষের মতোই, আগে কী কী ঘটেছে সেই সব মনে রাখতে পারে এই এইআই। আর তার মাধ্যমে, সেই প্রসঙ্গে টেনে এনে যথাযথ উত্তর দিতে পারে।
আপাতত OpenAI শুধুমাত্র বিটা টেস্টিংয়ের জন্য এই বট চালু করেছে। তবে আগামী কয়েক বছরেই API অ্যাক্সেস এসে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। API অ্যাক্সেস থাকলে তখন ডেভেলপাররা তাঁদের নিজস্ব সফ্টওয়্যারেই ChatGPT-র প্রয়োগ করতে পারবেন।
তবে এই বেটা ভার্সানেই ChatGPT-র নির্ভুল লেখার ক্ষমতা সত্যিই অভাবনীয়। কৌতুক, আবেগ, জটিল বিজ্ঞানের বিষয়, ইতিহাস- এ যেন সর্বজ্ঞানী কোনও অসীম শক্তিধর! পৃথিবীর এমন কিছু নেই, যার উত্তর তার অজানা। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, আপনি তাকে যেভাবে বলবেন, ঠিক সেভাবেই সে উত্তর দেবে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, AI অ্যালাইমেন্ট কী তা ব্যাখা কর, কিন্তু এমনভাবে বলবে, যেন তুমি তোমার বাড়িতে ফলানো কুমড়ো নিয়ে খুব উত্সাহী।
এর উত্তরও কার্যত নিখুঁতভাবে দিয়ে দেয় এই এআই। দেখুন সেই টুইট।
ইউটিউবার লিভ বইরি বলেন, ছেলেমেয়েদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে হোমওয়ার্ক করা এখন অতীত। এই চ্যাটজিপিটি-ই চোখের নিমেষে তাদের ৪ পাতা রচনা লিখে দেবে। অঙ্কের জটিল থেকে জটিলতর সমীকরণ চোখের নিমেষে সমাধান করে দেবে।
সফটওয়্যার স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ মাসাদ চ্যাটবটে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের একটি ভুল কোডিং দেন। দিয়ে লেখেন, 'এতে কী ত্রুটি আছে তা খুঁজে দেখাও দেখি।' দেখা যায়, ChatGPT সম্পূর্ণ নির্ভুল ভাবে সেটির ভুল ধরিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রীতিমতো কোডিং পেজের ছবিসহ কী ভুল ছিল, এবং কীভাবে তা সংশোধন করা যাবে, তারও ব্যাখা করে দিয়েছে।
তবে এখনও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে
ChatGPT বহু নির্ভুল উত্তর দিচ্ছে বটে। তবে এখনও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভুল তথ্য এবং পক্ষপাতিত্ব-দুষ্ট উত্তর দিচ্ছে এই এআই। এই একই সমস্যা GPT-র আগের ভার্সানগুলিতেও ছিল। অনেকে বলছেন, ChatGPT-র লেখার ধরনটা এতটাই আত্মবিশ্বাসী লাগে যে, ভুল বললেও যেন মনে হয় সে ঠিক উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বীজগণিতের ভুল সমাধান করছে এই এআই। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে এতটাই অতিরিক্ত ব্যাখা করা হচ্ছে যে তার উত্তরের কোনও মাথামুণ্ডুই দাঁড়াচ্ছে না।
নির্মাতা OpenAI-ও এই ত্রুটিগুলির বিষয়ে স্বীকার করেছে। তারা এক ব্লগ পোস্টে লিখেছে, 'ChatGPT মাঝে মাঝে যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু ভুল বা অর্থহীন উত্তর লেখে। এই সমস্যার সমাধান করাটাই এখন সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং।' আরও পড়ুন: Digital Rupee-তে টাকা লেনদেনের ভোল বদলে যাবে, দাবি SBI চেয়ারম্যানের
তবে সমস্যা যা-ই থাক, আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে কোন জায়গায় পৌঁছতে পারে, তারই যেন আভাস দিচ্ছে ChatGPT। এর ফলে বহু এআই সংস্থার বিপুল হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে একইসঙ্গে এর ফলে আগামিদিনে কোডিং, সৃষ্টিশীল লেখার কাজ, কাউন্সেলিং এমনকি খোদ গুগল সার্চেরও বাজার যে সঙ্কটে পড়তে পারে, তা বেশ স্পষ্ট।