বৌদ্ধ এবং হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। প্রাচীন তন্ত্র মতে এই রাতকে 'তারা রাত্রি'ও বলা হয়৷ মনে করা হয় এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে এবং সাধক বা সাধিকা নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি নিজের সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করে সিদ্ধি লাভ করেন৷
এবারে আমরা আলোচনা করব কেন এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। দেবী কৌশিকীর নাম অনুসারে এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা হয়েছে। বৈদিক শাস্ত্রমতে এই তিথিতে, এই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা এবং এই দিনে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয়া স্তরের অন্যতম দেবী তারা মর্ত ধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বীরভুম জেলায় অবস্থিত তারাপীঠে এই উপলক্ষে বিশাল উত্সব হয়৷ সকল তন্ত্রসাধকদের কাছে কৌশিকী অমাবস্যার এই রাত অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে শোনা যায়, সাধক বামাখ্যাপা এই অমাবস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
এই কৌশিকী অমাবস্যায় বহু তান্ত্রিক অপতন্ত্র সাধনা করে থাকে যার প্রভাব পড়তে পারে আমাদের সকলের উপরেও। তাই এই দিন অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচতে এই প্রাচীন পন্থা গুলি অবলম্বন করা উচিত
কৌশিকী অমাবস্যার দিন কোনোভাবেই কোনো আমিষ খাবার খাওয়া উচিত নয়, এর মাধ্যমে শরীরে ঋণাত্মক শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। শাস্ত্র মতে মনে করা হয় এই দিনে আমিষ খেলে জীবনে অমাবস্যার কালো ছায়া বা কুপ্রভাবের বিস্তার ঘটার সম্ভবনা থাকে।
কৌশিকী অমাবস্যার রাতে রাত্রির অন্ধকারে বাড়ির থেকে দূরে কোথাও যাত্রা করা উচিত নয়। এইদিন সকল তান্ত্রিকগন তন্ত্র সাধনা করতে বসেন। এর মাধ্যমে পরিবেশে যে সমস্ত নেগেটিভ ও পজিটিভ এনার্জির জন্ম হয়, তা আপনার যাত্রায় প্রভাব ফেলে থাকে এবং এর কারণে পথে ঘাটে বিপদের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
যদি বাড়ির বাইরে একান্তই যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই তুলসী পাতা সঙ্গে রাখা উচিত। এই তুলসী পাতা সঙ্গে থাকলে তা নেগেটিভ এনার্জি থেকে রক্ষা করে থাকে। তবে শাস্ত্র মতে বলা হয় যে তুলসীপাতা অমাবস্যার দিন তুলতে নেই। ফলে আগের থেকেই এই পাতা তুলে রাখতে হবে।
বৈদিক শাস্ত্র মতে মনে করা হয়, কৌশিকী অমাবস্যার রাতে, মা তারার চরণে লাল রক্ত জবা ও সিঁদুর অর্পণ করা উচিত। কৌশিকী অমাবস্যার দিন এমনটা করলে জীবনে সুফল পরিলক্ষিত হয়।
অপতন্ত্রের প্রভাবকে দূরে রাখতে কৌশিকী অমাবস্যার রাতে বাড়িতে ১০৮ টি তিল তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা উচিত। এতে সকল ঋণাত্মক শক্তি দূরে থাকবে।
বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে মনে করা হয় অমাবস্যায় গর্ভধারণ শুভ নয় এবং শুধু অমাবস্যা নয়, অমাবস্যা ছাড়াও পূর্ণিমা, চতুর্থী, ষষ্ঠী, অষ্টমী এবং চতুর্দশী তিথিতে গর্ভধারনের জন্য শুভ সময় নয়। তাই এদিন সঙ্গীর সাথে সঙ্গম করা থেকে বিরত থাকা উচিত৷ এই দিন সমস্ত রকমের যৌন অনুভূতি এড়িয়ে চলুন এবং গর্ভবতী মহিলাদের এই দিনে বাড়ি থেকে বের হওয়া উচিত নয়৷।
বিশেষজ্ঞ: মনোজিৎ দে সরকার
যোগাযোগ: 8777679776