২৫ নভেম্বর দেব প্রবোধিনী বা দেবোত্থান একাদশীর দিনেই তুলসী বিবাহ সম্পন্ন হয়। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে তুলসী বিবাহ করা হয়। তবে অনেকে দ্বাদশী তিথিতেও তুলসীর বিয়ে দিয়ে থাকেন। এখানে জানুন, বাড়িতে কী ভাবে তুলসী বিবাহ করবেন। কোন পৌরাণিক উপাখ্যানের ভিত্তিতে করা হয় তুলসী বিবাহ, তারও বর্ণনা রইল এখানে।
তুলসী বিবাহ বিধি:
তুলসী চারার চার দিকে মণ্ডপ তৈরি করুন। তুলসীকে লাল ওড়না অর্পণ করুন। এর পর শৃঙ্গারের জিনিসও অর্পণ করা উচিত। বিধি মেনে গণেশ ও শালিগ্রামের পুজো করুন। এর পর শালিগ্রামের মূর্তি যে সিংহাসনে রাখা রয়েছে, তা হাতে নিয়ে তুলসীর সাতবার প্রদক্ষিণা করান। আরতীর পর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
তুলসী বিবাহের পৌরাণিক কাহিনি:
পুরাণ অনুযায়ী, রাক্ষস বংশে জন্মগ্রহণ করে বৃন্দা নামক এক কন্যা। কিন্তু বৃন্দা ছোটবেলা থেকেই বিষ্ণুর ভক্তি ও আরাধনায় মগ্ন থাকতেন। পরে বিবাহযোগ্য বৃন্দার বিয়ে জলন্ধর নামক এক রাক্ষসের সঙ্গে করা হয়। তবে বিষ্ণুর আরাধনা ও পতিব্রতা হওয়ার কারণে বৃন্দার স্বামী জলন্ধর অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে ওঠে। তার ক্ষমতার আতঙ্ক ছড়ায় দেব-দেবীদের মধ্যেও।
জলন্ধর যুদ্ধে গেলেই বৃন্দা ঈশ্বর আরাধনায় মজতেন। বৃন্দার বিষ্ণু ভক্তি ও সাধনার কারণে জলন্ধর সমস্ত যুদ্ধে অপরাজিত থেকে যেত। একদা সমস্ত দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জলন্ধর। তখন আতঙ্কিত দেবতারা বিষ্ণুর স্মরণে যান।
জলন্ধরকে পরাস্ত করতে, বিষ্ণু জলন্ধরের রূপ ধারণ করে ছলনার আশ্রয় নিয়ে বৃন্দার পতিব্রত ধর্মকে নষ্ট করেন। এর ফলে জলন্ধরের শক্তি কমে যায় ও সেই যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়। বিষ্ণুর ছলনার কথা জানতে পেরে বৃন্দা নারায়ণকে শিলা অর্থাৎ পাথরে রূপান্তরিত হওয়ার অভিশাপ দেন। বিষ্ণুকে পাথরে পরিবর্তিত হতে দেখে দেবতারা ভীত হয়ে পড়েন। তখন লক্ষ্মীর প্রার্থনায় বৃন্দা নিজের অভিশাপ ফিরিয়ে নেন ও জলন্ধরের সঙ্গে সতি হন।
প্রচলিত আছে, বৃন্দার শরীরের ভস্ম থেকে একটি ছোট্ট চারার উৎপত্তি হয়। বিষ্ণু এর নাম দেন তুলসী। এর পর নিজের একটি রূপকে পাথরে সমাহিত করেন। বলেন যে, তুলসী ছাড়া তিনি কোনও প্রসাদই গ্রহণ করবেন না। এই পাথরই শালিগ্রাম নামে তুলসীর সঙ্গে পূজিত। তখন থেকেই কার্তিক মাসে তুলসী ও শালিগ্রামের বিবাহ হয়ে আসছে।