সরস্বতীর পুজোর হপ্তাখানেক আগে থেকেই বাজারে কুল বিক্রি হতে শুরু করে। কিন্তু কথিত আছে যে, সরস্বতী পুজোর আগে ভুলেও এই ফলটি খেতে নেই। বসন্ত পঞ্চমীর দিনে বাগদেবীর আরাধনার পরই সর্বপ্রথম প্রসাদ হিসেবে কুল গ্রহণের বিধান রয়েছে। কিন্তু কেন পুজোর আগের দিন পর্যন্ত কুল খাওয়া বারণ, তা কী জানেন? এর সঙ্গে একটি পৌরাণিক কাহিনি জড়িত।
পুরাণ অনুযায়ী, বৈদিক দর্শনবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশে সরস্বতীকে তুষ্ট করার জন্য মহামুনি ব্যাসদেব বদ্রিকাশ্রমে তপস্যা করেছিলেন। তপস্যা শুরুর আগে তাঁর তপস্যাস্থলের কাছে একটি কুল বীজ রেখে দেবী সরস্বতী। শর্ত আরোপ করেন যে, এই কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা এবং তা থেকে বড় গাছ, সেই গাছের ফুল থেকে নতুন কুল হবে। সেই কুল পেকে যে দিন ব্যাসদেবের মাথায় পড়বে, সে দিন তাঁর তপস্যা পূর্ণ হবে। তখনই প্রসন্ন হবেন দেবী সরস্বতী। দেবী এই শর্তে রাজি হয়ে ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন।
কয়েক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সেই বীজ থেকে কুল গাছ হয় এবং তাতে নতুন কুল ধরে। একদিন সেই কুল পেকে ব্যাসদেবের মাথায় পড়ে। এর পরই ব্যাসদেব বুঝতে পারেন যে দেবী তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁর তপস্যা পূর্ণ হয়।
সেই দিনটি ছিল বসন্ত শুক্ল পঞ্চমী তিথি। সে দিন বেদমাতা সরস্বতীকে কুল নিবেদন করে তাঁর পুজো করে ব্রহ্মসূত্র রচনা শুরু করেন ব্যাসদেব। এই বসন্ত পঞ্চমীর দিন দেবী সরস্বতী তুষ্ট হয়েছিলেন। তাই সরস্বতী পুজোর প্রধান ফলই হল কুল। কুল নিবেদন না-করে দেবীর পুজো সম্পন্ন হয় না। আর এ কারণে পুজোর আগে পর্যন্ত কুল খাওয়া থেকে বিরত থাকি আমরা। শ্রী পঞ্চমীর দিন দেবী সরস্বতীকে কুল নিবেদন করার পরই তা খাওয়ার রীতি প্রচলিত।
পুজোর আগে পর্যন্ত কুল না-খাওয়ার পিছনে আবার স্বাস্থ্যগত কারণও রয়েছে। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে কুল কাঁচা বা কশযুক্ত থাকে। এ ধরনের কুল শরীর ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।