২০০৯ সালে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের নেতা তথা তৃণমূল প্রধান নিশিকান্ত মণ্ডল। এত বছর ধরে মামলা চলার পর এই খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৮ জনকে বেকসুর খালাস করল হলদিয়া মহকুমা আদালত। উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে শনিবার মহকুমা আদালত তাদের বেকসুর খালাস করে। তবে এত বছর মামলা চলার পরেও অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পাওয়ায় হতাশ নিশিকান্তের পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: সুতপা চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে স্বঘোষিত প্রেমিক সুশান্তকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি দখলকে কেন্দ্র করে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল। শুরু হয়েছিল বিরোধীদের জমি আন্দোলন। সেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন নিশিকান্ত। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে তিনি পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের হয়ে নির্বাচনের লড়েন এবং নির্বাচনের তিনি জিতে সোনাচূড়া পঞ্চায়েতের প্রধান হন। তবে পরের বছর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। পরিবারের অভিযোগ ছিল, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁকে ফোন করে ডাকা হয়। সেই ফোন পেয়েই তিনি মোটরবাইকে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন। এরপর পঞ্চায়েত অফিসের সামনেই তাঁকে একের পর এক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপরই স্থানীয়রা সেখানে ছুটে আসেন। তাঁরা নিশিকান্তকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু, সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ ছিল, মাওবাদীরা তাঁকে খুন করেছে। এদিকে, নিশিকান্ত খুনের পরেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। লাল কাপড়ে লেখা থাকত, ‘বিশ্বাসঘাতক নিশিকান্তকে শাস্তি দেওয়া হল।’ তারপরে এই ঘটনাই উঠে আসে মাওবাদী যোগ। সেই ঘটনার তদন্তে পুলিশ রীনা প্রধান, বাসুদেব মণ্ডল, ভীম পাত্র, তেলেগু দীপক, শুভ দাস, মধুসূদন মণ্ডল এবং আরও একজনের নাম জানতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে খুনের ধারা সহ অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে পুলিশ। এরপর শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। একাধিক জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এই মামলায়। কিন্তু পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ মেলেনি। শনিবার হলদিয়া আদালতের বিচারক অঞ্জন কুমার সরকার তাদের বেকসুর খালাস করেন।
অভিযুক্তদের আইনজীবী বিমল মাজি জানিয়েছেন ,অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষী প্রমাণ না মেলায় তাদের বেকসুর খালাস করেছে আদালত। যদিও নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে নিশিকান্ত পরিবার হাইকোর্টে যাবেন কিনা সে বিষয়ে এখনও জানা যায়নি। তবে ১৪ বছর ধরে মামলা চলার পরেও অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ পরিবারের সদস্যরা।