শৈলশহরে নানা জটিলতার মধ্যে আবার একটি জটিলতা দেখা দিল। উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে তপ্ত হয়ে রয়েছে। তার মধ্যেই বিনয়–অনীতের দূরত্ব সেখানে বাড়তি চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিমল গুরুংকে ছেড়ে টানা চার বছর একসঙ্গে তাঁরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছেন। এখন বিনয় তামাং–অনীত থাপার মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে বলে সূত্রের খবর।
বিষয়টি ঠিক কী? এখানে গুরুত্ব পাওয়া এবং না পাওয়া থেকেই নাকি মুখ দেখাদেখি উঠেছে বলে মানুষজন বলছেন। অভিযোগ, বিনয়ের একক সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়েই অম্ল–মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এমনকী শীর্ষ নেতাদের প্রকাশ্যে কথা বলার ক্ষেত্রেও বিনয়ের আপত্তি দলে অসন্তোষ তৈরি করেছে। এখন অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন অনীত। তিনি জিটিএ’র চেয়ারম্যান হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে মোর্চার ভেতর থেকেই। বিনয় আগে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছের হলেও বিমলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল নয়। এখন বিমল ফিরে এসেছে। সেখানে বিজেপিকে মোকাবিলা করতে বিমল গুরুংকে দরকার। সেখানে অনীতের সঙ্গে বিমলের ইদানিং কোনও যোগাযোগ না হলেও যে কোনও মুহূর্তে তাঁরা পরস্পরের কাছাকাছি আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে অনীতকে সামনে নিয়ে এলে সব দিক বজায় থাকবে।
জানা গিয়েছে, দু’দিন আগে দার্জিলিংয়ের একটি হোটেলে বিনয়কে ছাড়াই সতীশ পোখরেল, অমর সিং রাই, অলককান্তমণি থুলুংদের নিয়ে বৈঠক করেছেন অনীত থাপা। তাঁর কথায়, ‘এটা মোর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বৈঠক। দার্জিলিং সদরে দলকে আরও মজবুত করতে হবে। তাই নেতাদের থেকে রিপোর্ট নিচ্ছি।’ আর বিনয়ের অনুপস্থিতি নিয়ে অনীতের বক্তব্য, ‘নির্বাচনের পর সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করছি। সভাপতি তা করতে বলেছিলেন। ওঁকে পরে জানাব।’
কিন্তু সূত্রের খবর, বিনয়পন্থী নেতাদের কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। যদিও এখনও কোনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। পাহাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা অংশ গুরুংয়ের পাশে চলে গিয়েছেন। আবার দলের বিভিন্ন মহকুমা, সমষ্টি, ব্লক কমিটি বিনয় তামাং নিজেই ভেঙে দেন। এবার কালিম্পং, তিস্তাবাজারে ভোটে জিতলেও দলের সাংগঠনিক সমস্যা চরমে দেখা দিয়েছে। দার্জিলিং সদরে তা ঠেকাতেই অনীত সবাইকে ডেকে বৈঠকে বসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
যদিও মোর্চা সূত্রে খবর, এই ফাটল নিয়েই বিরক্ত তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁরা চেয়েছিলেন, নির্বাচনের আগে বিনয়–বিমলের মধ্যে আসন সমঝোতা হোক। কিন্তু তা হয়নি। এখন বিনয়পন্থী মোর্চা ভেঙে যেতে বসেছে। তাই অনীতের প্রতি বেশি করে আস্থাবান হচ্ছেন প্রশাসনিক নেতৃত্ব। পাহাড়ে এখন প্রশ্ন, অনীতের এই বৈঠক কি নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত?