এপার বাংলা আর ওপার বাংলা। মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ওপারের বাসিন্দাদের আত্মীয়রা থাকেন এপারে। আবার এপারের বাসিন্দাদের আত্মীয়রা থাকেন ওপারে। কিন্তু মনের টান যে থেকেই যায়। আর সঙ্গে থাকে আবেগ। নাতির খোঁজে ভারতে আসা এক বাংলাদেশি বৃদ্ধের চোখে ধরা পড়ল সেই আবেগ। জেনে নিন সেই কাহিনি।
গত ৪ জুলাই রাতে ধানতলা থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বরুণবেড়িয়া থেকে আটক করা হয়েছিল সুইত রহমান নামে এক যুবককে। ধানতলা থানার পুলিশ তাকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গ্রেফতার করে।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেন ইন্ডিয়ায় চলে এসেছিলেন সুইত রহমান? আসলে বাংলাদেশে কাজের কোনও খোঁজ পাননি তিনি। এরপরই তিনি রাগ করে দেশ ছাড়েন।
এদিকে সুইতের গ্রেফতারির খবর ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপরই এনিয়ে খোঁজখবর করা শুরু করেন বাংলাদেশে থাকা পরিবারের লোকজন। এরপর সুইতের দাদু আবুল হোসেন নাতিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ থেকো সোজা ইন্ডিয়ায়। মাঝে পাসপোর্ট-ভিসা করতে তার কয়েকদিন দেরি হয়ে যায়। কিন্তু ভারতে আসতে তিনি একেবারে বদ্ধপরিকর।
এরপর তিনি পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে সোজা ভারতে চলে আসেন। খুঁজতে-খুঁজতে এরপর রানাঘাট আদালতে চলে আসেন তিনি। কারণ তিনি খোঁজ পেয়েছিলেন রানাঘাট উপ সংশোধনাগারে রয়েছে তাঁর নাতি।
বয়সের ভারে জীর্ণ শরীর। তবু মনের জোর কমেনি এতটুকু। সেই ওপার বাংলার ঝিনাইদহ থেকে এতটা পথ আসা। পথশ্রমেও বৃদ্ধ ক্লান্ত। কিন্তু তাঁর একমাত্র আশা হল নাতিকে যেমন করে হোক দেশে ফেরাতে হবেই।
কীভাবে এলেন তিনি ভারতে?
তিনি গত সোমবার রাতে গেলে সীমান্ত দিয়ে এদেশে এসেছেন। এরপর নাতির খোঁজে আদালতে। সূত্রের খবর, আগামী ৩০ অগস্ট বাংলাদেশি যুবক সুইতকে আদালতে তোলা হবে। এরপর তাঁকে দেশে ফেরানোর অনুমতি মিলবে কি না সেটা তখনই ঠিক হবে। নাকি খালি হাতে দেশে ফিরতে হবে বৃদ্ধ আবুল হোসেনকে তার জন্য় আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
তবে এভাবে নাতিকে ফেরাতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে বৃদ্ধ নাতির তৎপরতা মন ছুঁয়ে গিয়েছে ভারতের আইনজীবীদেরও। আসলে ছোটবেলায় সুইতের বাবা মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে কোথাও কাজ জুটছিল না। এরপর মায়ের সঙ্গে রাগ করে সীমান্ত টপকে এদেশে চলে এসেছিলেন। কিন্তু দুই বাংলা যে আর এক নয়। দুই প্রতিবেশী দেশে এভাবে অবৈধভাবে প্রবেশ করা যায় না। তবে এবার বাংলাদেশের সুইতকে তার দাদু কি আদৌ ফেরাতে পারবেন? আইনি জটিলতার বাইরেও বড় হয়ে উঠেছে আবেগ।