বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন অমিত শাহ এবং জেপি নড্ডা। তারপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বঙ্গ–বিজেপির কারা টিকিট পাবেন? কোন আসনে পাবেন? বিজেপির অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছেই। তার মধ্যে সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল। এই আবহে সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার কাছে রাজ্যের ৪২টি আসনের খসড়া প্রার্থীতালিকা জমা পড়েছে। এখান থেকে ঝাড়াই–বাছাই করে পাকাপাকি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই প্রার্থী তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী।
এদিকে শাহ–নড্ডার উপস্থিতিতে কোর কমিটির বৈঠকে দেখা যায়নি জাত গোখরোকে। কিন্তু যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রটি মিঠুনকেই দেওয়া হয়েছে। আর মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষ টিকিট পাচ্ছেন না। কারণ তাঁকে ডায়মন্ডহারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রার্থী করা হচ্ছে। এটা খসড়া তালিকায় রয়েছে। চূড়ান্ত সিলমোহর তাতে পড়েনি। তবে বঙ্গ–বিজেপির নেতারা দিলীপ ঘোষকে সাইড করতেই এমন করেছেন কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ ওখানে বারবার জিতে এসেছেন অভিষেক। তার উপর বিস্তর কাজ হয়েছে। ওখান থেকে বিজেপির কেউ জিতে আসা কার্যত অসম্ভব। সেখানে এমন নাম কেন? উঠছে প্রশ্ন।
অন্যদিকে মেদিনীপুরে অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে প্রার্থী করতে চাইছে বঙ্গ–বিজেপি। মেদিনীপুর কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমি কাউকে ছাড়তে চাই না, আর ছাড়ার প্রশ্নও নেই।’ খসড়া প্রার্থী তালিকায়, বর্ধমান–দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার নাম নেই। মালদা উত্তর ও রানাঘাট কেন্দ্রের বিদায়ী দুই সাংসদ খগেন মুর্মু ও জগন্নাথ সরকারের নামও নেই। মন্ত্রী সুভাষ সরকারের টিকিট পাওয়া নিয়ে বাধা আছে। লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বদলের সম্ভাবনা প্রবল। তবে মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ও জন বারলার নাম আছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে নাম আছে জয়ন্ত রায় ও দেবশ্রী চৌধুরীর। এবারও সাংসদ রাজু বিস্তার উপরই ভরসা রাখা হচ্ছে দার্জিলিং কেন্দ্রে। সুকান্ত মজুমদার নাম আছে বালুরঘাট কেন্দ্রে।
এছাড়া কাঁথি কেন্দ্র থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রার্থী হওয়াও এখনও নিশ্চিত নয়। সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী দল বদলে এবার তমলুক আসনে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। ঘাটালে আবার ভারতী ঘোষ এবং ঝাড়গ্রামে এবারও সাংসদ কুমার হেমব্রমের নাম আছে। বারাসত থেকে বিজেপির দাঁড় করাতে চাইছে অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দকে। হুগলির আরামবাগ কেন্দ্রে নাম রয়েছে মধুসূদন বাগের। বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া কেন্দ্রে নাম রয়েছে সৌমিত্র খাঁ ও জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর। বর্ধমান–দুর্গাপুর ও আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী করতে চাইছে কেয়া ঘোষ ও অগ্নিমিত্রা পালকে। আর বর্ধমান পূর্ব আসনে পরেশচন্দ্র দাসের নাম আছে। বীরভূমে বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডলের নাম আছে। ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে সাংসদ করতে চায় বিজেপি। নেত্রী মাফুজা খাতুনকে এবার বহরমপুরের আসনে প্রার্থী করতে চায় বিজেপি। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে নাম রাখা হয়েছে মোহন হালদারের। উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে কাউন্সিলর সজল ঘোষের নাম রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় কারও নাম নেই।
আরও পড়ুন: তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের ব্যাটন প্রবীণদের হাতেই, নবীনরা নীরবে নিভৃতে
আর নদিয়ার দুটি কেন্দ্রেই সদ্য প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নাম আছে। রানাঘাটে প্রার্থী করতে চায় অর্চনা মজুমদারকে। শ্রীরামপুরে আইনজীবী নেতা দেবজিৎ সরকারের নাম আছে। বসিরহাটে শমীক ভট্টাচার্যের নাম রয়েছে। বনগাঁয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নাম আছে। ব্যারাকপুরে বিপ্লব মিত্র বা মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায় একজনকে চায় বিজেপি। আর দমদমে রাহুল সিনহা এবং রিমঝিম ঘোষের নাম রয়েছে। জয়নগরে মোহন সরকার ও মথুরাপুরে দিলীপ জাটুয়াকে প্রার্থী করতে চায় বিজেপি। তবে এগুলি সবই খসড়া তালিকার নাম। চূড়ান্ত তালিকা কি হয় এখন সেটাই দেখার।