ছেলেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু, টাকার অভাবে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে পারেননি বাবা। তার জেরে মৃত্যু হল ছেলের। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির পর এবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে শিশুর মৃতদেহ বিনামূল্যেই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে মানবিকতার নজির তৈরি করলেন এক বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক। জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর নাম রোহিত কাঞ্চা (৭)। শনিবার গভীর রাতে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিশুর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: ডাক্তার ইঞ্জেকশন দিতেই কিশোরীর মৃত্যু, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিশুর বাড়ি রায়গঞ্জের মেরুয়াল বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন গোবিন্দপুর গ্রামে। তার বাবার নাম কবি কাঞ্চা। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল ওই শিশু। বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে শিশুকে শুক্রবার রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান তার বাবা। কিন্তু, সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকরা রক্ত জোগাড় করতে বললে কোনওভাবে কষ্টসাধ্য করে এক ইউনিট রক্ত জোগাড় করেন শিশুর বাবা। কিন্তু, তারপরেও শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। তখন রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা শিশুকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করার পর পরামর্শ দেন। কিন্তু, তার জন্য প্রয়োজন ছিল অ্যাম্বুলেন্স। সেইমতো শিশুর বাবা অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করেন। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করেন তিনি। তবে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ২ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করেন। কিন্তু, এই পরিমাণ টাকা না থাকায় তিনি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারেননি। ঠিক করেছিলেন রবিবার টাকা জোগাড় করে ছেলেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাবেন। কিন্তু, তার আগেই শনিবার গভীর রাতে ছেলের মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হৃদযন্ত্রে সমস্যা ছিল ওই শিশুর। তার পরিবারের দাবি, বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করা হয়েছিল কিন্তু পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, গর্ভবতী মহিলা এবং এক বছরের কম শিশুদের সহকারি খরচে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তার বাইরে বিনা খরচে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার নিয়ম নেই। শেষে শিশুর মৃতদেহ বিনা খরচে বাড়িতে পৌঁছে দেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক সঞ্জিত সরকার। তিনি জানান, মানবিকতার খাতিরেই তিনি এই কাজ করেছেন।