ব্যবসায় মন্দা চলছিল। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন। এবার স্ত্রী-পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী হলেন বস্ত্র ব্যবসায়ী। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে সোদপুর স্টেশন সংলগ্ন বসাক বাগান এলাকায়।
শুক্রবার সকালে এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পান প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় খড়দহ থানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ির দরজা ভাঙতে গৃহকর্তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেই সঙ্গে পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায় স্ত্রী ও ছেলের নিথর দেহও। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম সমীরকুমার গুহ (৫৮)। তিনি পোশাক ব্যবসায়ী ছিলেন। বসাক বাগানের নিজস্ব বাড়িতে স্ত্রী ঝুমা গুহ (৪৮)ও ছেলে বাবাই (২৩) কে নিয়েই থাকতেন তিনি।
গত দু’ তিনদিন ধরে পরিবারের কাউকে ঘর থেকে বেরোতে দেখেননি প্রতিবেশীরা। এদিন বাড়ি থেকে হঠাৎই দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। পুলিশে খবর দেন পড়শিরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয়। ঘরে দরজা ভেঙে তাঁরা ঢুকে দেখে, স্ত্রী ও ছেলের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে রয়েছে আর গৃহকর্তা গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন। গৃহকর্তা সমেত ৩ জনের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই সমীরবাবুর ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। এরপর থেকেই তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সংসার ও ব্যবসা চালাতে গিয়ে বাজারে থেকে প্রচুর ধার দেনাও করে বসেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরেই তাঁকে অন্যমনস্ক লক্ষ্য করেন প্রতিবেশীরা। সবার সঙ্গে কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দেন তিনি। ইদানিং তাঁকে বাড়ির বাইরেও খুব একটা বেরোতে দেখা যেত না।
এদিন সকালে গুহ বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পান প্রতিবেশীরা। হঠাৎই দুর্গন্ধ পাওয়ায় সন্দেহ হয় পাড়া প্রতিবেশীদের। তাঁরাই খড়দহ থানায় বিষয়টি জানান। এরপরই পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তিনজনই মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদেহগুলোর পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে বলে। সমীরবাবুর এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখা রয়েছে, ‘প্রিয় পার্থ ঘোষ তোকে দায়িত্ব গিয়ে গেলাম ঘরের যে আসবাব পত্র রয়েছে তা বিক্রি করে বকেয়া টাকাগুলো মিটিয়ে দিস।’ বেশ কয়েকজন টাকা প্রাপকের নামও লেখা রয়েছে সেখানে। এর থেকেই পুলিশের অনুমান, দেনার দায়েই এই ঘটনা। তবে সবদিক খোলা রেখেই তদন্ত করছে পুলিশ। মৃতদেহগুলি সাগর দত্ত পুলিশ মর্গে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।