মঙ্গলবার দুর্গাপুরের বেনাচিতিতে বিজেপি–র যোগদান মেলার অনুষ্ঠানে বাম–কংগ্রেসের কর্মী–সমর্থকদের কাছে বিজেপি–র হয়ে ভোট চাইলেন শুভেন্দু অধিকারী। নজিরবিহীন এই আবেদনের কারণও এদিন তিনি জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখানকার বামপন্থী লোকেদের, কংগ্রেসের যে দু–চারজন আছেন তাঁদের বলব, এবারের ভোটটা বিজেপি–কে দিন। দলের মিছিলে যাচ্ছেন যান।’ কিন্তু কেন বিজেপি–কে ভোট দেবেন সেই কথাও জানিয়ে দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে পঞ্চায়েতের নির্বাচন হবে। তৃণমূল কোথাও ভোট করতে দেয়নি।’
শুভেন্দু অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৭ সালে দুর্গাপুর কর্পোরেশনের নির্বাচনে কীভাবে বাইরে থেকে মুখে গামছা লাগিয়ে লোক নিয়ে এসে তৃণমূল ভোট করিয়েছে সেটা সবাই দেখেছে। এমনকী সিপিএমও এই কাজ করেনি।’ এর পরই শুভেন্দুর আশ্বাস, ‘বিজেপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বিজেপি ক্ষমতায় এলে গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েতের নির্বাচন হবে। দুর্গাপুরে কর্পোরেশনের ভোট হবে। পরিবার নিয়ে বুথ কেন্দ্রে গিয়ে আপনারা নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন।’
এদিনও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলে আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, ‘আজ গোটা দুর্গাপুর, আসানসোল, বারাবনি, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, গলসি— এই বিস্তীর্ণ এলাকায় যেভাবে অবৈধ কয়লা খনি গড়ে উঠছে, নদীপথের মানচিত্র পাল্টে দেওয়া হচ্ছে, তার পিছনে রয়েছে ভাইপো।’ শুভেন্দু বলেন, ‘ভাইপো কেন আমাকে বাঁকুড়া–পুরুলিয়ার অবসার্ভার হিসেবে তাড়িয়ে দিয়েছিল জানেন? কারণ, বালি আর কয়লার টাকা নিতে অসুবিধা হচ্ছিল, তাই। লালা, এনামুল, বিনয় মিশ্রর ঘরে সিবিআই পৌঁছে গিয়েছে। আর একটা চৌকাঠ পেরোলেই তোলাবাজ ভাইপো।’
এদিন যোগদান মেলায় তৃণমূল ও অন্য দল থেকে কয়েক হাজার কর্মী–সমর্থক বিজেপি–তে যোগ দিয়েছে বলে দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে এদিন মঞ্চে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং ৪ সাংসদ এস এস আলুওয়ালিয়া, ডাঃ সুভাষ সরকার, সুনীল মণ্ডল, অর্জুন সিং প্রমুখ। তৃণমূলত্যাগী শুভেন্দু তাঁর বর্তমান দল বিজেপি–র ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘তিন সপ্তাহ হয়েছে আমি প্রাইভেট কোম্পানি তৃণমূল ছেড়ে এসে বিজেপি–তে যোগ দিয়েছি। এই অল্প সময়ের মধ্যেই কেউ সন্তানের মতো, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ বন্ধু, কেউ দাদার মতো বিজেপি–তে আমায় আপন করে নিয়েছে।’
বিজেপি–তে শুভেন্দুর ঠিক কী দায়িত্ব, সেটাও এদিন জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমার দায়িত্ব একটাই, সেটা হল বিজেপি–কে আরও বেশি হৃষ্ট, পুষ্ট, বলিষ্ঠ করা। বাংলাকে আমাদের বিজেপি–র হাতে তুলে দিতেই হবে। না হলে পশ্চিমবঙ্গের যে অনাচার, অবিচার, বেকারত্ব তা নির্মূল হবে না। রাজ্যে শিল্পায়ন একেবারে ধ্বংসের মুখে, কৃষকরা পিএম কিষান থেকে বঞ্চিত, আয়ুস্মান ভারত থেকে আমরা বঞ্চিত, এভাবে পশ্চিমবঙ্গকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। বিজেপি–র হাতে বাংলাকে তুলে দিতেই হবে।’
উল্লেখ্য, এদিন সভা শেষে দুর্গাপুরে রোড শো করেন শুভেন্দু অধিকারী। রোড শো–তে তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, অর্জুন সিং, এস এস আলুওয়ালিয়া, সুনীল মণ্ডলরা। মঙ্গলবার সন্ধেয় প্রান্তিকা মোড় থেকে রোড শো শুরু হয়ে শেষ হয় ভিরিঙ্গি মোড়ে। ট্যাবলো থেকে এদিন মানুষের উদ্দেশে ফুল ছুড়তে দেখা যায় শুভেন্দু, বাবুল সুপ্রিয়দের।