প্রাথমিকভাবে ডিসান হাসপাতালের উপর ‘ডোজ’ দেওয়া হয়েছিল। এবার সার্বিকভাবে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কড়া দাওয়াই দিল স্বাস্থ্য কমিশন। একদিকে যেমন লাগামছাড়া বিলের উপর লাগাম টানা হল, তেমনই স্পষ্টতই নির্দেশ দেওয়া হল, বিনা চিকিৎসায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ফেরাতে পারবে না কোনও বেসরকারি হাসপাতাল।
দীর্ঘদিন ধরেই করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। কখনও অস্বাভাবিক চড়া বিল নেওয়া, কখনও রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, কখনও আবার লাগামছাড়া অগ্রিম দিতে না পারায় চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগীর পরিজনরা। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার কড়া নির্দেশ জারি করেছেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। একনজরে দেখে নিন সেই নির্দেশগুলি -
বেড ভাড়া বাবদ বাড়তি টাকা নেওয়া যাবে না। গত ১ মার্চ যে হারে বেড ভাড়া নেওয়া হত, এখনও সেই হারে ভাড়া নিতে হবে। আইসিইউ, আইটিইউ, আইসিসিইউয়ের অজুহাতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবে না।
বেসরকারি হাসপাতালগুলি কোনও রোগীকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
অগ্রিম টাকা জমা না দিলেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, টাকা বন্দোবস্ত করার জন্য রোগীর পরিজনদের ১২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। সেই টাকা জমা দেওয়ার জন্য আরও এক ঘণ্টা সময় দিতে হবে। তবে সেই ১৩ ঘণ্টার মধ্যেও টাকা জমা দিতে না পারলে রোগীকে বিনা চিকিৎসায় রাখা যাবে না বা ফেলে রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতর বা স্বাস্থ্য কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
করোনা রোগীদের ওষুধে ১০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনবে রোগীর পরিবার।
পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট (পিপিই), তুলো, ব্যান্ডেজ-সহ চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জামে ২০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। তার ফলে সামগ্রিক চিকিৎসার বিল কমবে।
চিকিৎসকের ফি বা ভিজিট ১,০০০ টাকার বেশি হবে না। তবে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, অনেক সময়ে কোনও রোগীকে একাধিকবার ভিজিট করতে হয়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ফি আরও ১,০০০ টাকা বাড়ানো যাবে। অর্থাৎ চিকিৎসকদের ফি সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা হতে পারে।
করোনা রোগীদের কী কী পরীক্ষা করা হবে, তা কতবার করা হবে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে আট সদস্যের কমিটি। সেই পরীক্ষাগুলির খরচ বেঁধে দেওয়ার জন্য প্যাথলজি ও রেডিয়োলজির বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে ছয় সদস্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসার রেট চার্ট রাখতে হবে। তাতে বেড চার্জ, চিকিৎসক দেখার চার্জ-সহ যাবতীয় পরিষেবার খরচ লিখে রাখতে হবে। নিদেনপক্ষে হাসপাতালের প্রবেশপথে, রিসেপশন এবং টাকা জমা দেওয়ার কাউন্টারের সামনে সেই রেট চার্ট রাখা থাকবে। একইসঙ্গে এমনভাবে চার্ট রাখতে হবে, যাতে ছ'ফুট দূরত্ব থেকে তা খালি চোখে দেখা যায়।
একইভাবে হাসপাতালের ডিসপ্লে বোর্ডে স্বাস্থ্য কমিশনের যোগাযোগের নম্বর রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনে রোগীর পরিজনরা স্বাস্থ্য কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।