নদিয়ার কল্যাণীর জহরলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এমআরআই থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, সিনিয়র চিকিৎসকদের অন্ধকারে রেখে এই সমস্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর সেই বিল চলে যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরে। ফলে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকার বিল মেটাতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ওঠার পরেই তৎপর হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার তদন্তে গঠিত হয়েছে কমিটি।
অভিযোগ, রোগীর এমআরআইয়ের প্রয়োজন না হলেও পিপিপি মডেলে চলা পরীক্ষাকেন্দ্রে রিকুইজিশন চলে যাচ্ছে। এছাড়া সিটি স্ক্যানের জন্যও রিকুইজিশন চলে যাচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিমাসে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে দেড় হাজার এমআরআই হচ্ছে। এক একটির খরচ আড়াই হাজার টাকা। সে হিসেবে শুধুমাত্র এমআরআই বাবদ মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। আর সিটি স্ক্যান বাবদ খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার বিল হচ্ছে পরীক্ষা বাবদ। তবে সবক্ষেত্রে যে পরীক্ষা হচ্ছে তা নয়। কিছু কিছু পরীক্ষা আবার হচ্ছেও না। যদিও ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের বক্তব্য, ডাক্তারদের স্টাম্প, সই করা রিকুইজিশন পেলে তবে পরীক্ষা করা হয়।
এই রিকুইজিশন পাঠানোর পিছনে হাসপাতালের কিছু জুনিয়র ডাক্তার জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের। জুনিয়র ডাক্তাররা কমিশনের বদলে এই চক্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে গত ১৭ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান সিনিয়র ডাক্তাররা। তার ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোমককুমার দাস।
রাতের দিকে রোগীদের প্রেসক্রিপশন বদলে এই কাজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। এক অভিযুক্তর বক্তব্য, তিনি দু মাসের হাউসস্টাফশিপ শেষ করেছেন। এখন তিনি কলেজের কেউ নন। তবে তিনি নিয়মিত কলেজে আসছেন বলেই জানা গিয়েছে।
এই অভিযোগ ওঠার পরেই পরীক্ষায় দুর্নীতির রুখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২০ জুন হাসপাতালের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, এবার থেকে সিনিয়র ডাক্তাররাই রোগীর এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান পরীক্ষার বিষয়টি লিখবেন। তাতে পুরো স্বাক্ষর এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখতে হবে। তবে কোনও জরুরী ক্ষেত্রে জুনিয়রদের রিকুইজিশন দিতে হলে সে ক্ষেত্রে সিনিয়রদের জানাতে হবে। তারপরে পুরো স্বাক্ষর এবং স্থায়ী বা অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নম্বর রিকুইজিশন লিখতে হবে।