মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের জন্য 'অমঙ্গল' বার্তা বয়ে আনল শেয়ার বাজার। তার জেরে একদিনেই বিনিয়োগকারীদের পকেট থেকে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেল। লোকসানের মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ৩৮৩.৬৯ পয়েন্ট (০.৮৬ শতাংশ) পতনের জেরে মঙ্গলবার বাজার বন্ধের সময় সেনসেক্স ৭৩,৫১১.৮৫ পয়েন্টে ঠেকেছে। অন্যদিকে, ১৪০.২ পয়েন্ট (০.৬২ শতাংশ) পড়েছে নিফটি। দিনের শেষে ২২,৩০২.৫ পয়েন্টে ঠেকেছে। কেন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগে শেয়ার বাজারের পতন হচ্ছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? আর মে'তে কি শেয়ার বাজার ঠিক হবে?
১) বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রি:
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যে বিক্রির পথে হেঁটেছেন, সেটা শেয়ার বাজারের পতনের অন্যতম কারণ। ইক্যুইনোমিক্স রিসার্চ প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা জি চোক্কালিঙ্গম বলেছেন, 'বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্রমশ বিক্রি করে যাচ্ছেন। যা ঘরোয়া খুচরো বাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।'
সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘সাধারণত লোকসভা নির্বাচনের আগে বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কেনার পথে হাঁটেন না। যদি প্রিমিয়ামও দিতে হয়, তাহলেও নির্বাচনের ফলাফলের উপর অপেক্ষা করেন তাঁরা। গত দু’দশক ধরে এই প্রবণতা দেখছি।' উল্লেখ্য, আগামী ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের গণনা হবে।
২) নির্বাচনী ধাক্কা: শেয়ার বাজারের পতনের আরও একটি কারণ হতে পারে লোকসভা নির্বাচন। যদিও শেয়ার বাজার মনে করছে যে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরবে, সেটা মনে করছে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। কিন্তু প্রথম দুটি দফায় ভোটদানের হার কিছুটা কম হওয়ায় বাজারে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: কীভাবে ভেনিসের মুদ্রা ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতে? ইতিহাসের পাতায় লেখা বিস্ময়কর অধ্যায়
জিয়োজিৎ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভিকে বিজয়কুমার বলেন, 'এখনও পর্যন্ত এবারের নির্বাচনে প্রত্যাশার তুলনায় ভোটদানের হার কম হওয়ায় সম্ভবত (বাজারের মনে) কিছুটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে।'
৩) বেশি দামে ট্রেডিং: কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজের মতে, আগের তুলনায় বেশি দামি স্তরে ভারতীয় শেয়ার বাজারে ট্রেডিং হচ্ছে। আর সেটার কারণেই শেয়ার বাজারে পতন হচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
৪) চতুর্থ ত্রৈমাসিকে হতাশাজনক 'ফলাফল': এখনও পর্যন্ত যে যে সংস্থার গত অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলির ফলাফল খুব একটা ভালো নয়। কোটাকের তরফে জানানো হয়েছে, চতুর্থ ত্রৈমাসিকের বিভিন্ন সংস্থার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ইতিবাচক কোনও চমক নেই। প্রত্যাশামতোই ফল হয়েছে।
আরও পড়ুন: World Best Stews: শাহি পনির, কোরমা আর…! বিশ্বের সেরা ৫০ খাবারের তালিকায় ৯টি ভারতের
বিষয়টি নিয়ে কোটাক ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজের তরফে জানানো হয়েছে, কয়েকটি সংস্থা তো প্রত্যাশার থেকে খারাপ ফল করেছে। আউটসোর্সিংয়ের মতো বিষয়গুলিও কিছুটা দুর্বল রয়েছে। যা বাজারের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
শেয়ার বাজারের ‘স্বাস্থ্য’ আরও খারাপ হবে?
পেস ৩৬০-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চিফ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট অমিত গোয়েল জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে একেবারে 'পারফেক্ট' জায়গায় ছিল ভারতীয় বাজার। সবকিছু ঠিকঠাক যাচ্ছিল। কিন্তু যত ভোটগণনার দিনক্ষণ এগিয়ে আসবে, তত বাজারে উদ্বেগ কিছুটা বাড়বে। তাঁর ধারণা, মে'তে আরও কিছুটা পতন হতে পারে।