বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি। ঝিঁঝি পোকার ডাক। মাঝেমধ্যে সেটাও থেমে যাচ্ছে। কাঁচের জানালার সামনে থাকা পর্দাটা অল্প অল্প দুলছে। সঙ্গে করে গল্পের বই নিয়ে এসেছেন আপনি। একমনে পড়ছিলেন। বাইরে ঝুপ করে কীসের শব্দ…কালিম্পংয়ের মরগ্যান হাউস।
আজও পর্যটকদের টানে এই 'ভুতুড়ে' বাংলো। আসলে এটা পর্যটকদের মুখে মুখে ভুতুড়ে বাড়ি বলেই পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের অনেকেই বলছেন, এখানে থাকার অভিজ্ঞতা সারাজীবন মনের মণিকোঠায় থেকে যাবে। নির্জন পাহাড়, এখানকার মায়াবী কুয়াশা, ভোরবেলা পাখির ডাক, কাছেই গলফ কোর্স সবটাই স্বপ্নের মতো মনে হয়। ভূত টূত ওসব লোকমুখে শোনা কথা। বাস্তবে ওসব হয় নাকি? বর্তমানে রাজ্য সরকারের পর্যটন উন্নয়ন নিগম এই মরগ্যান হাউসটি চালায়।
এবার পর্যটকদের কাছেই জানা যাক এই মরগ্যান হাউসে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা। অধ্যাপিকা অর্পিতা চৌধুরী। ছোট্ট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কালিম্পংয়ের মরগ্যান হাউজে। এখানে বুকিং পেতে কিন্তু বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। কারণ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণের এই জায়গা।
তাঁর কথায়, কোনও অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা আমাদের হয়নি। এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে খোলা গ্রীন স্পেস পেয়ে টলোমলো পায়ে ছুটে বেরিয়েছে। স্টাফরা প্রচন্ড হেল্পফুল।অত্যন্ত আরামদায়ক ও শান্তির জায়গা এই মরগ্যান হাউস।
মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল পাবলিক অ্য়াফেয়ার্স অফিসের পদস্থ কর্তা ছিলেন দীপঙ্কর দাশগুপ্ত। এখন তিনি পাহাড়ে। বেড়াচ্ছেন। তিনি সোশ্য়াল মিডিয়ায় লিখেছেন, ছটা পাঁচে অ্যালার্ম দিয়েছিলাম। আগেই পৌনে ছটায় ঘুম ভেঙে গেল। মরগ্যান হাউসের ১০১ নম্বর ঘরে থাকার বাড়তি সুবিধা হল দরজা দিয়ে বেরিয়ে তিন ধাপের কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নেমেই….চমৎকার ছাদ বারান্দা।অনেকে 'তেনাদের' সম্ভাব্য দর্শন নিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভোরবেলা বুঝলাম সেই ভাগ্য আর হল কই। ঈশ্বরের সাক্ষাৎ আর তেনাদের দর্শন তো সমগোত্রীয়। দুয়ের জন্যই পূণ্যাত্মা হতে হয়। লিখেছেন তিনি।
কিন্তু মরগ্যান হাউসকে নিয়ে কেন এই ভূতের কাহিনি?
আসলে ১৯০০ সালে জর্জ মর্গান এই বাংলো তৈরি করেছিলেন। তিনি ছিলেন পাটের ব্যবসায়ী। মর্গান সাহেব বিয়ের পরে এই বাংলোতে মাঝেমধ্যে থাকতেন। লেডি মর্গানের প্রিয় বাড়ি ছিল এটি। তাঁর মৃত্যুর পরে….
আসলে এই বাড়ির পরিবেশটাই এমন যে অন্যরকম অনুভূতি হয়। তবে ভূতের ভয় মন থেকে বের করে দিন। এখানে থাকার যে অভিজ্ঞতা হবে বিশেষত বৃষ্টিভেজা রাতে, তা এককথায় অনন্য। বলা হয় এখানে কিশোর কুমার, উত্তম কুমারের মতো ব্যক্তিত্বরা রাত কাটিয়েছেন। এখান থেকেই দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা, কালিম্পং ভ্যালি। মন ভরে যাবে।এনজেপি থেকে গাড়ি নিয়ে অথবা কালিম্পং থেকে ২০ টাকার শেয়ার কারে চলে আসুন মরগ্যান হাউস। চারপাশে আরও রিসর্ট রয়েছে। দেখুন মন ভালো করা কালিম্পং।