বছরদুয়েক আগে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল ইজরায়েলের জিম প্রশিক্ষক মোঃ আল-শেনবারির বিষয়ে। যিনি গৃহস্থালির এক বা একাধিক জিনিসকে অবিশ্বাস্যভাবে একটি বিন্দুতে ব্যালেন্সিং (পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্ট) করেন। সেই খবরে প্রবল আগ্রহ জন্মেছিল পশ্চিমবঙ্গের একটি কলেজের অধ্যাপক ডঃ প্রিয়দর্শী মজুমদারের (৪৬) মনে। তারইমধ্যে জানতে পারেন দক্ষিণ কোরিয়ার রকি বায়ুনের বিষয়ে। দুই শিল্পীর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারসাম্যকে বশ মানিয়ে ফেলেন। যে ভারসাম্য শিল্প এতটাই বিরল যে পৃথিবীতে এরকম শিল্পীর সংখ্যা হাতেগোনা।
কী এই পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্ট?
পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্ট একটি অসাধারণ পারফর্মিং আর্ট বা প্রাণায়াম। যা একটি বা একাধিক জিনিসকে একসঙ্গে নিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এটি একটি বিশুদ্ধ মন এবং হাত নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া। এই অসাধারণ বিরল শিল্পের জন্য অতি শক্তিশালী মনস্তাত্বিক শক্তি, দুর্দান্ত পরিমাপ দক্ষতা, নিরঙ্কুশ ধৈর্য, সৃজনশীলতা এবং প্রাথমিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বোঝার প্রয়োজন। মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব যে কোনও বস্তুতে বল এবং টর্ক তৈরি করে। পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্ট এই টর্ককে শূন্য করে দেয়। তাই বস্তু বা বস্তুসমষ্টির ভরকেন্দ্র বেস পয়েন্টের উপরে উল্লম্বভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। সাধারণ ব্যালেন্সিং এবং পয়েন্ট ব্যালেন্সিংয়ের মধ্যে পার্থক্য হ'ল প্রথমটির ক্ষেত্রে বেস পয়েন্টের ক্ষেত্রফল বড় হতে পারে তবে পরেরটির জন্য বেস ক্ষেত্রটি খুব ক্ষুদ্র বা জ্যামিতিক বিন্দুর কাছাকাছি হয়। পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্টের দুটি প্রধান অংশ রয়েছে। প্রথমে আর্টের পরিকল্পনা করতে হয় (কোন বস্তু বা কোন কোন বস্তুসমষ্টিকে একটি বিন্দুতে ধরে রাখা হবে, সেটা ঠিক করতে হবে এবং তারপরে আর্টটি কার্যকর করতে হবে। দক্ষতার স্তরের উপর নির্ভর করে অনেকগুলি বস্তুকে একইসঙ্গে ভারসাম্যে রাখা যেতেই পারে। সঠিকভাবে ব্যালেন্স করা বস্তু বা বস্তুসমষ্টি বাইরে থেকে বলপ্রয়োগ না করলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
সেই শিল্পেই এখন পারদর্শী হয়ে উঠেছেন নাগেরবাজারের বাসিন্দা প্রিয়দর্শী। যিনি বিভিন্ন গৃহস্থালির জিনিসপত্র নিয়ে ব্যালেন্সিং করে চলেছেন। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট ব্যালেন্সিং হল - কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতলের মুখে একটি, দুটি, তিনটি চেয়ার, টেবিল, সিআরটি টেলিভিশন, প্লাস্টিকের স্যুটকেস, বড় সোফা, কাঠের আলমারি ব্যালেন্সিং, দুই ইঞ্চি কাচের শিশির উপর নয়টি ইটের ব্যালেন্সিং, একটি বিন্দুর উপর একাধিক গ্লাস ও কাপের ব্যালেন্সিং, কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতলের মুখে রেঞ্চের সাহায্যে বড় এলপিজি সিলিন্ডার ব্যালেন্সিং ইত্যাদি। ডঃ মজুমদার এইরকম ১২৫ টিরও বেশি ব্যালেন্সিং আর্ট তৈরি করেছেন। যা করতে তাঁর মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। তারইমধ্যে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসেও তাঁর নাম উঠেছে। সর্বাধিক পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্টের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
প্রিয়দর্শী ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের শিক্ষক, ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স বিষয়টির স্নাতক স্তরের বোর্ড অফ স্টাডিজের একজন সদস্য। বিজ্ঞানের বিবিধ বিষয়ে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা থেকে বহু আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রথম সারির বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি সংবাদপত্রে নিয়মিত লেখালেখি করেন। আর্ট-এন্ড-ক্র্যাফটের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্তরের ব্যবসাও সংগঠিত করেছেন তিনি। নিজের কলেজেও তিনি বিভাগীয় শিক্ষক শ্রী সন্দীপ দের সহায়তায় বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ইলেকট্রনিক বর্জ্য ও এল.ই.ডি. ব্যবহার করে বিবিধ শিল্পসামগ্রী তৈরি করেছেন।