সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে আরও অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের। তাঁকে পুরো পরিবারের সম্পত্তি হিসাব জমা দিতে বলেছে হাইকোর্ট। কিন্তু কেন প্রাথমিক টেট মামলায় এরকম অস্বস্তিতে পড়েছেন মানিক, তা জেনে নিন -
২০১৪ সালের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পরের বছর ১১ অক্টোবর টেট হয়েছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল দ্বিতীয় মেধাতালিকা।
সেই দ্বিতীয় মেধাতালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন রমেশ আলি। তিনি দাবি করেন, দুর্নীতির জন্য দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল।
সেই মামলায় সম্প্রতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক এবং তৎকালীন সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।
তারইমধ্যে ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে হাইকোর্ট। চলতি মাসের শুরুতে পর্ষদের আইনজীবী জানান, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটের ১৬৯ জনকে অতিরিক্ত এক নম্বর দিয়ে পাশ করানো হয়েছিল। সেই নম্বরের ভিত্তিতে তাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন। তারপরই তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেন।
গত সপ্তাহে হাইকোর্টে সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্টে পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়েছে, ২৬৯ নয়, মোট ২৭৩ জনকে অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়া হয়েছিল।
প্রাথমিক পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, কেন নম্বর বাড়ানো হয়েছিল? পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, একটি প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল। সেজন্য এক নম্বর বাড়ানো হয়েছিল। ভুল প্রশ্ন নিয়ে মোট ২,৭৮৭ টি আবেদন জমা পড়েছিল। তাঁদের মধ্যে ২৭৩ জন প্রশিক্ষিত ছিলেন। তাই তাঁদের বাড়তি এক নম্বর দেওয়া হয়েছিল। মোট ১৮ লাখ প্রার্থী অনুত্তীর্ণ হলেও তাঁদের খুঁজে বের করা সম্ভব ছিল না। তাই যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদেরই বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়েছিল।
সেই পরিস্থিতিতে সোমবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাল নথি পেশের দায়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। হাইকোর্টের তরফে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের থেকে যে নথি চাওয়া হয়েছিল, তা সেদিনই জমা পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জানায়, যে নথি জমা পড়েছে, তা ভুয়ো। মানিকের থেকে ২০১৭ সালের নথি চাওয়া হয়েছিল। তিনি ২০২২ সালে বানানো নথি পেশ করেছেন। মঙ্গলবার তাঁকে হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেওযা হয়েছিল।
সেই মামলায় মঙ্গলবার হাইকোর্টে হাজিরা দেন মানিক। সবমিলিয়ে ২৮ টি প্রশ্নের মুখে পড়েন। সেইসঙ্গে আগামী ৫ জুলাইয়ের মধ্যে মানিকের পুরো পরিবারের স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হলফনামা আকারে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মানিকের স্ত্রী, ছেলে এবং বউমা কত সম্পত্তির মালিক, তাও জানাতে হবে। শুধু তাই নয়, বিয়ের আগে পর্যন্ত মানিকের মেয়ের নামে কত সম্পত্তি ছিল, তাও বিস্তারিতভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।