ঠিক দু’বছর আগে। দুর্গাপুজোর তৃতীয়ার দিনে প্রেমিকাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। এই কুকর্মের অভিযোগ উঠেছিল প্রেমিক–সহ চারজনের বিরুদ্ধে। আর ২০২৩ সালের দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে ওই চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করল মুর্শিদাবাদের লালবাগ বিশেষ পকসো আদালত। বুধবার চতুর্থীতে কড়া সাজা ঘোষণা করল আদালত। এই চারজনের আমৃত্যু যাবজ্জীবনের নির্দেশ দিলেন বিচারক দীপ্ত ঘোষ। দু’বছর সময় লাগলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে অপরাধীরা। সুতরাং অভিযুক্তদের এমন শাস্তির খবরে স্বস্তি পেলেন নির্যাতিতার পরিবার।
এদিকে শুধু শাস্তিতেই থেমে নেই বিষয়টি। অপরাধীদের দু’লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করেছেন বিচারক। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকার আরও চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। আর অপরাধীদের দেওয়া জরিমানার আট লক্ষ টাকা যোগ করে মোট ১২ লক্ষ টাকাই পাবেন নির্যাতিতা। রাজ্য সরকারকে বিচারকের নির্দেশ, এই জরিমানার টাকা নির্যাতিতা যাতে উচ্চশিক্ষায় এবং সমাজে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খরচ করতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘দু’বছর আগে তৃতীয়ার দিন যে ঘটনা ঘটেছিল, আজ অভিযুক্তদের শাস্তি পাইয়ে দিয়ে মা দুর্গাকে এই রায় উৎসর্গ করলাম। মেয়েটি যাতে আগামী দিনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে, তার জন্যই এই ক্ষতিপূরণ।’
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছিল? ২০২১ সালে দুর্গাপুজোর সময় মুর্শিদাবাদ শহরে মামার বাড়িতে বেড়াতে যায় নাবালিকা। ফেসবুকে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় মেয়েটির। যুবকের বাড়ি নাবালিকার মামার বাড়ির কাছেই হওয়ায় সম্পর্ক এগিয়ে যায়। দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের ফোনে কথাবার্তা থেকে দেখা–সাক্ষাৎ সবই চলে। এভাবেই মেয়েটির বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে যুবকটি। তাকপর মামার বাড়িতে বেড়াতে এলেই নাবালিকার সঙ্গে দেখা করার জন্য বারবার জোর করে এই প্রেমিক। তৃতীয়ার রাতে মেয়েটিকে দেখা করতে বলে প্রেমিক। রাজি হয় মেয়েটি। তারপর একটি নির্জন জায়গায় দেখা করতে গেলে ওই প্রেমিক এবং আরও তিনজন অর্থাৎ চারজন মিলে নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন: হাতির হানায় মৃত্যু দুই বৃদ্ধের, টুইট করে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মমতার
তারপর ঠিক কী ঘটল? পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তরা ওই অপরাধের ভিডিয়ো করে রাখে। আর হুমকি দেয় কাউকে বললে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। মেয়েটি অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেও বাড়ির কাউকেই কিছু বলেনি। পরে ওই ভিডিয়ো ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে আবার সহবাস করতে চায় প্রেমিক। মেয়েটি সাড়া না দেওয়ায় মেয়েটির মায়ের মোবাইলে সেই ভিডিয়ো পাঠায় ওই যুবক। এই ঘটনার পর পুলিশের দ্বারস্থ হন মা। আর পুলিশ ফাঁদ পেতে প্রথমে তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরে চতুর্থজনকে ধরে ফেলে। শুরু হয় মামলা। দু’বছর আগে তৃতীয়ায় ঘটে ঘটনা। আর এই বছর চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হল তৃতীয়াতেই। দুই অভিযুক্তের শরীরে থাকা উল্কি ভিডিয়ো–তে দেখতে পাওয়া যায়। যা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করে পুলিশকে।