ঝাড়ফুঁক করলেই নাকি সাপে কাটা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। সেই বিশ্বাস নিয়ে অনেকে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে সাপে কাটা রোগীকে সোজা নিয়ে চলে যান ওঝার কাছে। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। অনেক ক্ষেত্রেই কার্যত বিনা চিকিৎসার মৃত্যু হয় বহু সাপে কাটা রোগীর। কিন্তু, ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামে। সাপে কটা রোগীকে নিজেই হাসপাতালে নিয়ে গেলেন ওঝা। আর শেষমেষ ওই রোগী বেঁচেও গেলেন। ঘটনাটি জিবনতলা থানার হোমরা পলতা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: পরীক্ষা চলাকালীন ক্লাসরুমে ঢুকে ছাত্রীকে ছোবল মারল সাপ
জানা গিয়েছে, ঘুমোনোর সময় সাপে কামড়ে দিয়েছিল ওই গ্রামের বাসিন্দা আসমা গায়েনকে। তখন খবর দেওয়া হয় ওঝা কাবিল জমাদারকে। তিনি খবর পেয়ে সোজা ছুটে আসেন ওই রোগীর বাড়িতে। এরপর রোগীর ক্ষত স্থান খতিয়ে দেখে সময় নষ্ট না করে নিজেই তৎপরতার সঙ্গে রোগীকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে বেঁচে যান ওই রোগী। ওঝার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন চিকিৎসকরা। শুধুমাত্র আসমা গায়েনকেই নয়। এরকম অনেক সাপে কাটা রোগীকে তৎপরতার সঙ্গে নিজের উদ্যোগে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়েছেন কাবিল।
জানা গিয়েছে, কাবিল এবং তাঁর বাবা বাবুরালি জমাদার দুজনেই ওঝা। প্রথমে কাবিল সাপে কাটা রোগীর ঝাড়ফুঁক করতেন। শিকড় বাকর, ওষুধ দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু পরে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সংস্থার সংস্পর্শে এসে তিনি সচেতন হয়ে ওঠেন। এরপর কোন ওরোগীকে সাপে কামড়ালে তা খতিয়ে দেখেন। তারপরে যদি বুঝতে পারেন যে বিষধর সাপে কামড়েছে তখনই তিনি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কখনও কখনও নিজেও হাসপাতালে নিয়ে যান রোগীকে। এরকম ভাবেই তিনি প্রায় ৩০ জন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।আর যদি বিষহীন সাপ হয় তাহলে নিজেই চিকিৎসা করে রোগীকে পরামর্শ দেন।কাবিল জানান, তিনি যুক্তিবাদী সংস্থার সংস্পর্শে এসে সচেতন হয়ে রোগীদের প্রয়োজন বুঝে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, বর্ষা শুরু হতেই বেড়েছে বিষধর সাপের প্রকোপ। ভাঙড়ের গ্রামীন এলাকায় প্রায় সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে ওঝার দ্বারস্থ হচ্ছেন রোগীর পরিবার। ফলে সে ক্ষেত্রে জীবন বাঁচানোর মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হচ্ছে বহু রোগীর। এ নিয়ে চিকিৎসকরাও রোগী পরিবারকে সচেতন করছেন। যদিও ভাঙড়ে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার ততটা বেশি নয়। তবে জেলায় সাপের কামড় সম্পর্কে সচেতনতা শিবির হওয়ায় সমস্যা অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন এক স্বাস্থ্য অধিকারিক।