গতকাল নৃশংস নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী থাকল পটাশপুর। এই ঘটনা রীতিমতো ক্রাইম থ্রিলারকে হার মানাবে। গলায় কাটারির কোপ মেরে স্ত্রীর মাথা কেটে নিল স্বামী। তারপর স্ত্রীর রক্তাক্ত কাটা মুণ্ডু একহাতে এবং অপরহাতে কাটারি নিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়ায় ওই যুবক। নারকীয় এই দৃশ্য দেখে এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পটাশপুর থানার মংলামাড়োর চিস্তিপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। মৃত ফুলরানি গুচ্ছাইতের (২৮) কাটা মুন্ডু ও দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই যুবকের জন্যই ২০২১ সালের ১৯ মার্চ সকাল ১১টায় আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে শোরগোল পড়ে যায়। কারণ এই যুবক পশুরাজের খাঁচায় ঢুকে পড়েছিল। তৎক্ষণাৎ ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়। সিংহের হামলায় পায়ে চোট পেলেও পরে সুস্থ হয়েই বাড়ি ফেরে ওই যুবক। তিন বছর পর ওই যুবকের কাণ্ডে আলোড়ন পড়ে সারা রাজ্যে।
এদিকে অভিযুক্ত গৌতম গুচ্ছাইতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনে ব্যবহৃত কাটারি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এগরা মহকুমার পুলিশ আধিকারিক দেবীদয়াল কুণ্ডু বলেন, ‘যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন। পারিবারিক বিষয়ে অশান্তি থেকে ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে তদন্ত চলছে।’ গৌতম ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’–তে স্ত্রীকে কাটারি দিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। স্ত্রীর কাটা মুন্ডু হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। অভিযুক্ত যুবক যাতে ছাড়া না পায় সেই দাবি করছেন এলাকাবাসী পুলিশের কাছে। কিন্তু কেন এমন করলেন গৌতম? উঠছে প্রশ্ন।
অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, ১২ বছর আগে গৌতম–ফুলরানির বিয়ে হয়। তাদের ১১ বছরের ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। গৌতম চিপস ও নানারকম মুখরোচক খাবার বানিয়ে ফেরি করত। ঝুপড়িতে স্ত্রী–ছেলেকে নিয়ে থাকত। বাবা–মা, দাদা–বউদিরা আলাদা থাকতেন। স্ত্রীর সঙ্গে কারও প্রণয়ের সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করত গৌতম। তা থেকেই অশান্তি। গতকালও ঝুপড়ির বাইরে উনুনে চিপস ভাজার সময় বচসা বাধে। বচসা চলাকালীন হঠাৎ রুদ্রমূর্তি ধারণ করে গৌতম। বাড়িতে রাখা কাটারি বের করে স্ত্রীর গলায় কোপ মারে। আর ধড় ও মুণ্ড আলাদা হয়ে যায়। গৌতমের দাদা উত্তম গুছাইত বলেন, ‘তিন বছর আগে ভাই যখন সিংহের খাঁচায় ঢুকে পড়েছিল তখন ওর মানসিক অবস্থা খারাপ ছিল। পরে সুস্থও হয়ে যায়।’
আরও পড়ুন: হাওড়া–কাটোয়া শাখায় ব্যাহত ট্রেন পরিষেবা, লাইনে দাঁড়িয়ে তিন জোড়া লোকাল
এছাড়া গৌতমের গোটা পরিবারই হতভম্ব এই ঘটনায়। গৌতমের বাবা–মাকে আটক করেছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাটা মুণ্ডু নিয়ে রাস্তায় গর্জন করে গৌতম বলতে থাকে, ‘কাটা মুণ্ডুটি আমার বিয়ে করা বউয়ের। মুণ্ডুটি কাটার জন্য তৃণমূল সরকার সাহায্য করেছে এবং আইন আমায় বাধ্য করেছে। আমি রক্তের বন্ধনে ও সত্যের সন্ধানে জেলে যাচ্ছি। আপনারা আমায় আশীর্বাদ করুন, জেল থেকে ফিরে যেন নতুন ইতিহাস গড়তে পারি’। এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘পটাশপুরে স্ত্রীর মুন্ডু কাটার ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতদেহ এবং কাটা মুন্ডুও উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত চলছে। ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’