ব্যাট, বল, ফিল্ডিং- তিন ক্ষেত্রেই অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে বাজিমাত করল কলকাতা নাইট রাইডার্স। রবিবার রাতে লখনউ সুপার জায়ান্টসের ঘরের মাঠে তাদের হারিয়েই রাজস্থান রয়্যালসকে টপকে গেল কেকেআর। পয়েন্ট টেবলের শীর্ষস্থান দখল করলেন শ্রেয়স আইয়াররা। প্লে-অফ কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল নাইটদের। ১১ ম্যাচে এখন কেকেআর-এর পয়েন্ট ১৬। সমসংখ্যক ম্যাচে রাজস্থানের পয়েন্ট সমান থাকলেও, নেট রানরেটে এগিয়ে গেল নাইটরা।
এদিন প্রথম ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন সুনীল নারিন। সঙ্গে রমনদীপ সিংয়ের সংক্ষিপ্ত সুনামী তো ছিলই। তার পর বল হাতে আগুনে মেজাজে ধরা দেন হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী, আন্দ্রে রাসেলরা। যার নিটফল কেকেআর-এর দেওয়া ২৩৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লখনউ গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৭ রানে। কলকাতা নাইট রাইডার্স ৯৮ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয়।
এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রানের পাহাড় গড়ে ফেলে নাইটরা। ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান করে কেকেআর। লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে যে কোনও টি২০ ম্যাচে এই প্রথম বার দু'শো রানের গণ্ডি পার হল। প্রথমে ব্যাট করে এটি রেকর্ড রান লখনউয়ের মাঠে।
এদিন কেএল রাহুলদের ডেরায় শুরুতেই ঝড় তোলেন সুনীল নারিন। তাও আবার এমন মাঠে যেখানে রান করা সহজ নয়। ৩৯ বলে ৮১ রান করেন নারিন। তাঁর এই বিধ্বংসী ইনিংসে রয়েছে ৭টি ছক্কা, ৬টি চার। যেভাবে খেলছিলেন নারিন, মনে হয়েছিল আইপিএলে দ্বিতীয় শতরান করে ফেলবেন। কিন্তু রবি বিষ্ণোইয়ের বলে বাউন্ডারি লাইনে দেবদত্ত পাডিক্কালের হাতে ধরা পড়েন। এই একই ওভারেই আগে দু'বার সুযোগ দিয়েছিলেন নারিন। একবার ক্যাচ নেওয়া সত্ত্বেও বাউন্ডারি লাইনের বাইরে পাডিক্কালের পা চলে যাওয়ায় ছয় হয়ে যায়। দ্বিতীয় বার কঠিন ক্যাচ মিস করেন মহসিন খান। কিন্তু সেই ওভারেই বিষ্ণোইয়ের বলে আউট হন নারিন। তবে তার আগে যা ড্যামেজ করার করে দিয়েছিলেন কেকেআর-এর তারকা অলরাউন্ডার। নারিন যখন সাজঘরে ফিরছেন, তখন কেকেআর-এর সংগ্রহ ১২ ওভারে ২ উইকেটে ১৪০ রান।
আরও পড়ুন: ১১টি ম্যাচের মধ্যে দশটিতেই টসে হার, দু'বছর আগের RR-এর অবাঞ্ছিত রেকর্ড ছুঁল রুতুরাজের CSK
এদিন শুরু থেকেই নারিনের সঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন ফিল সল্টও। তবে তিনি ৫টি চার, একটি ছক্কার হাত ধরে ১৪ বলে ৩২ করে আউট হয়ে যান। তাঁকে ফেরান নবীন-উল-হক। কিন্তু সল্ট আউট হলেও, নারিন স্কোরবোর্ডে রানের গতি কমতে দেননি। পাওয়ার প্লের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে নাইটদের রান ছিল ৭০। ৯ ওভারে ১০০ রানে পৌঁছে যায় কেকেআর। তবে নারিন আউট হওয়ার পর রানের গতি কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল কেকেআর-এর। আসলে এর পরেই কেকেআর খুব দ্রুত আরও ৪ উইকেট হারায়। আন্দ্রে রাসেল ১৪.২ ওভারে ৮ বলে ১২ করে আউট হয়ে যান। তাঁকে ফেরান নবীন-উল-হক। এর পর ১৫.১ ওভারে আংকৃষ রঘুবংশীকে ফেরান যুধবীর সিং। ২৬ বলে ৩২ করেন আংকৃষ। রিঙ্কু সিং-ও এদিন ফের ব্যর্থ হন। ১১ বলে ১৬ করে নবীনের বলে আউট হয়ে যান রিঙ্কু। শ্রেয়স আইয়ারকে ফেরান যশ ঠাকুর। ১৫ বলে ২৩ করেন শ্রেয়স। তবে সাতে ব্যাট করতে নেমে রমনদীপ সিংয়ের ক্যামিও ইনিংসের হাত ধরে ২৩০ রানের গণ্ডি টপকে যায় কেকেআর। ৬ বলে অপরাজিত ২৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন রমনদীপ। তাঁর এই ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা এবং একটি চার। লখনউয়ের হয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন নবীন-উল-হক। একটি করে উইকেট নিয়েছেন যশ ঠাকুর, রবি বিষ্ণোই এবং যুধবীর সিং।
আরও পড়ুন: মুস্তাফিজুর, চাহারের পর ফের বড় ধাক্কা খেল CSK, চোট সারাতে দেশে ফিরে গেলেন লঙ্কান পেসারও
লখনউও শুরুটা খারাপ করেনি। তাদের ইনিংসের প্রথম বলেই বৈভব অরোরাকে চার হাঁকিয়ে শুরুটা করেন কেএল রাহুল। দ্বিতীয় ওভারে আবার মিচেল স্টার্ককে জোড়া চার হাঁকান আর্শিন কুলকার্নি। তবে এর পরেই রমনদীপের একটি ক্যাচ ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। স্টার্কের এই ওভারের শেষ বলে ক্যাচ তোলেন আর্শিন। ব্যাটের কানায় লেগে বল একস্ট্রা কভারের দিকে উঠে যায়। কভারে ফিল্ডিং করছিলেন রমনদীপ। তিনি বল লক্ষ্য করে পিছনের দিকে পিছিয়ে গিয়ে, পরে ডাইভ দিয়ে ক্যাচটি ধরেন। এই ক্যাচটিকে আইপিএলের সেরা বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। এই উইকেট কিছুটা হলেও ধাক্কা হয়ে যায় কেএল রাহুলদের জন্য। তবে তখন রাহুল এবং স্টোইনিস ক্রিজে ছিলেন। ভরসা ছিল লখনউয়ের। পাহাড় প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে, রাহুল-স্টোইনিসের পার্টনারশিপটা খুবই প্রয়োজন ছিল। সেভাবেই এগোচ্ছিলেন দুই তারকা। কিন্তু জুটিতে তাঁরা ৬০ রান যোগ করার পরেই ধাক্কাটা দেন হর্ষিত রানা।
রাহুলকে ফেরান রানা। ক্যাচ ধরেন সেই রমনদীপ। ২১ বলে ২৫ করে সাজঘরে ফেরেন লখনউয়ের অধিনায়ক। পরের ওভারেই বরুণ চক্রবর্তী ফেরান দীপক হুডাকে। হুজা ৩ বল খেলে ৫ করে সাজঘরে ফেরেন। এর পর আন্দ্রে রাসেল নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসে আউট করেন স্টোইনিসকে। ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার হাত ধরে ২১ বলে ৩৬ করে আউট হন স্টোইনিস। এটাই লখনউয়ের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান। এর পর থেকেই নির্দিষ্ট ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে লখনউ। আর এক বিপজ্জনক ব্যাটার নিকোলাস পুরানও ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। আয়ুষ বাদোনি করেছেন ১৫ রান। ১৬ রান করেছেন অ্যাশটন টার্নার। বাকিরা তো এক অঙ্কের ঘরই টপকাতে পারেননি। ১৬.১ ওভারে ১৩৭ রানে অলআউট হয়ে যায় লখনউ। কেকেআর-এর হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন বরুণ এবং হর্ষিত। ২টি উইকেট নিয়েছেন রাসেল। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক এবং সুনীল নারিন।