টাকা না দিলে পশ্চিমবঙ্গে এখন চাকরি হয় না। একটি মামলায় এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগের চার মাসের মধ্যে যে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাঁকে ছয় মাসের মধ্যে পুনর্বহালের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। বিচারপতি বলেন, ‘মানিক ভট্টাচার্যকে টাকা দেননি বলে হয়ত মামলাকারীর চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছিল।’
বিষয়টি ঠিক কী? গত বছরের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদের একটি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান মিরাজ শেখ। তাঁর দাবি, নিয়োগের চার মাস পরে স্নাতক স্তরে প্রয়োজনীয় নম্বরের থেকে কম পাওয়ার যুক্তি দর্শিয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। যে বিষয়টি সার্ভিস বুক তৈরি করার সময় নজরে পড়ে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে দাবি করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: জেলের বিশেষ মেনুতে খাসির মাংস-ভাত, মন ভরে খেলেন পার্থ, মেজাজ ফুরফুরে…
যদিও মিরাজ দাবি করেন, বেআইনি তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করেন মামলা। হাইকোর্টে মিরাজ জানান, সংরক্ষিত প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের নিয়মে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য জেনারেল প্রার্থীদের স্নাতক স্তরে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। সংরক্ষিত প্রার্থীদের ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। সেখানে ৪৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন মিরাজ।
সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ছয় মাসের মধ্যে ওই শিক্ষককে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে কড়া ভাষায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘মানিক ভট্টাচার্যকে (পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি) টাকা দেননি বলে হয়ত মামলাকারীর চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে এখন টাকা না দিলে চাকরি হয় না।’
বিতর্কে মানিক
উল্লেখ্য, প্রাথমিক টেট দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন মানিক। ২০১৪ সালের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পরের বছর ১১ অক্টোবর টেট হয়েছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল দ্বিতীয় মেধাতালিকা। সেই দ্বিতীয় মেধাতালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন রমেশ আলি।
তিনি দাবি করেন, দুর্নীতির জন্য দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই মামলায় সম্প্রতি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক এবং তৎকালীন সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তারইমধ্যে ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: Arpita Mukherjee: জেলে অর্পিতাকে জেরা করলেন ইডির আধিকারিকরা, কাকে দুষছেন পার্থ ঘনিষ্ঠ?
গত জুনের শুরুতে পর্ষদের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটের ২৬৯ জনকে অতিরিক্ত এক নম্বর দিয়ে পাশ করানো হয়েছিল। সেই নম্বরের ভিত্তিতে তাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন। তারপরই তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টে সেই রিপোর্ট জমা পড়ে।
সেই রিপোর্টে পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়, ২৬৯ নয়, মোট ২৭৩ জনকে অতিরিক্ত এক নম্বর দেওয়া হয়েছিল। পর্ষদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, একটি প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল। সেজন্য এক নম্বর বাড়ানো হয়েছিল। ভুল প্রশ্ন নিয়ে মোট ২,৭৮৭ টি আবেদন জমা পড়েছিল। তাঁদের মধ্যে ২৭৩ জন প্রশিক্ষিত ছিলেন। তাই তাঁদের বাড়তি এক নম্বর দেওয়া হয়েছিল। মোট ১৮ লাখ প্রার্থী অনুত্তীর্ণ হলেও তাঁদের খুঁজে বের করা সম্ভব ছিল না। তাই যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদেরই বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়েছিল।