মাত্র ৫ জন পড়ুয়াকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গড়ে তোলা ছোট একটা স্কুল আজ কলেবরে বিরাট হয়ে হয়েছে বিশ্বভারতী, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেলার মাঠ এখন নাকি হয়ে উঠেছে দেহব্যবসা আর মাদক কারবারের ঠিকানা। শুক্রবার এমনই অভিযোগ তোলেন রাজ্য বিজেপি–র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল।
শুক্রবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরই এই মন্তব্য করেন অগ্নিমিত্রা। ওদিকে, বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও এর আগে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, মেলা চলাকালীন মাঠে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নরেন্দ্র মোদি।
১৭ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট ভাঙা–সহ ক্যাম্পাসের বহু সম্পত্তির ওপর ভাঙচুর চালায় স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দারা। ওদিন বিশ্বভারতীর পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার কাজ শুরু হলে দুটি গেট ভেঙে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এর পর থেকেই স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে বিতর্কের পাশাপাশি বিজেপি এবং শাসকদল তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কোন্দল।
শুক্রবার ওই মাঠ পরিদর্শনের পর অগ্নিমিত্রা পাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সূর্য ডুবলেই এই মাঠে শুরু হয় দেহব্যবসা। গাঁজা, চরসের ঠেক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাদকের কারবারও হয়ে ওই মাঠে। এই কারণেই ওই খোলা মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের এটা বোঝা উচিত যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলেন তখন এখানে এ সব কিছু ছিল না। কিন্তু এখন সময়ের সঙ্গে সব কিছুই বদলে গিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নিয়োগ করা হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। তা ছাড়া ৫০ মিটারেরও কম দূরে শান্তিনিকেতন থানা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর এমন মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।
যদিও ক্যাম্পাসে বা মেলার মাঠে কোনও অসামাজিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে থানায় কখনও অভিযোগ দায়ের হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে বিশ্বভারতীর অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ কর্তা অনির্বাণ সরকার জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনও তথ্য নেই। আর এ ব্যাপারে উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘বিজেপি তার স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে এই সব ভুয়ো অভিযোগ করে চলেছে। বিশ্বভারতীর উপাচার্য নিজেই বিজেপি দ্বারা মনোনিত। যদি ক্যাম্পাস চত্বরে কোনওরকম অসামাজিক কাজকর্ম হয়ে থাকে তবে তা রোধ করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।’
উল্লেখ্য, ২৪ অগস্ট নোটিশ জারি করে উপাচার্য নিরাপত্তার খাতিরে সমস্ত অধ্যাপক এবং কর্মচারীদের ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকতে বলেন। তাঁদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ অর্থাৎ বাড়িতে থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরের দিন, কয়েকজন বিজেপি–ঘেঁষা শিক্ষাবিদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়ন করার আর্জি জানান। ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের ঘটনার পর দুবরাজপুরের তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউড়ি–সহ ৪ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।