গত দু’মাসে তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখে আনতেই শোনা যায়নি দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে শহিদ দিবসের সভামঞ্চ থেকে সেই দূরত্ব যেন আরও বাড়ে। একই আঁচ পাওয়া যায় বুধবার বাগুইআটির অনুষ্ঠান থেকেও। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘাটালে এক বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর মুখে অনেকদিন পর শোনা গেল এই তিনটি শব্দ— তৃণমূল, দল ও নেত্রী।
এদিন ঘাটাল শহরের বিদ্যাসাগর স্কুলের খেলার মাঠে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল দাসপুর–১ নম্বর ব্লকের একটি ক্লাব। সেখানেই মূল অতিথি ছিলেন ‘দাদা’ শুভেন্দু অধিকারী। আর এদিন তাঁর আগমনে উল্লাসে ফেটে পড়েন ‘অনুগামী’রা। শয়ে শয়ে মানুষকে সভামঞ্চের সামনে কোনও ছাউনি ছাড়া বসে থাকতে দেখে উষ্মা প্রকাশ করেন শুভেন্দু। তাঁদের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা বলতে গিয়ে ভাব প্রকাশের স্বার্থেই এদিন ‘তৃণমূল’ শব্দটি তাঁর মুখে শোনা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় নীচে–বসা কর্মী, তৃণমূল স্তরের কর্মী— সেই সব আসল সম্পদের কথা ভাবি। এই ঘাটালে আমার ছাত্রজীবন থেকে যাতায়াত। ছাত্র রাজনীতির সময় এসেছি। ঘাটাল কলেজ–সহ হাতে গোনা কয়েকটি কলেজে ধীরে ধীরে আমাদের সংগঠন বাড়িয়েছি।’
পুরনো কথা বলতে গিয়ে এদিন আবেগে ভাসেন শুভেন্দু। অনেকদিন পর স্মৃতিচারণায় শুভেন্দুর মুখে উঠে এল তাঁর ‘দল’–এর প্রসঙ্গ। ঘাটালের সঙ্গে তাঁর অনেক পুরনো যোগাযোগ, এদিন সেটা তিনি মনে করিয়ে দেন। বলছিলেন, ‘যখন নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরে কৃষকদের লড়াইয়ে শত শত মানুষ আত্মবলিদান দিয়েছেন তখন আমার দল ঘাটাল, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোণা, আরামবাগ, তারকেশ্বর পুরসভা নির্বাচনে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। আমি তখন তমলুকের সাংসদ।’
তাঁর রাজনৈতিক জীবনে লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। ঘাটাল মহকুমায় যে পাঁচটি পুরসভা ছিল তার দায়িত্ব ছিল আমার কাঁধে। তখন তো এত ভাল গাড়ি, হুডখোলা জিপ— এত বৈভব ছিল না। ওই হাতি গাড়ির পিঠে চেপে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত শক্তিশালী সিপিএমের বিরুদ্ধে পাড়ায় পাড়ায় হাতজোড় করে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। ঘাটালে কংগ্রেসও শক্তিশালী ছিল। অনেক কষ্ট করে ঘাটাল পুরসভায় পাঁচটি আসনে জিতেছিলাম। আমি সে সব দিনের কথা ভুলে যাইনি।’
শেষে শুভেন্দুর কথায় আসে ‘নেত্রী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখ। দলের জন্য তিনি কী করেছেন, তার এক ছোট উদাহরণ এদিন দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে আমাদের নেত্রীর নেতৃত্বে দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াই হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে ঘাটালে নির্বাচনের আগে আমাদের দলের প্রার্থীকে লক্ষ্মণপুরে হাত ভেঙে মেরে ফেলে দিয়েছিল কয়েকজন। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি করে পৌঁছে দেখি, স্থানীয় নার্সিংহোমে যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন আমাদের প্রার্থী। তখনই অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে এলাম কলকাতায় কোঠারি হাসপাতালে।’
শুভেন্দু জানান, সেদিন ওই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে তিনি একা ঢুকেছিলেন লক্ষ্মণপুর গ্রামে। সঙ্গে ছিল সরকারের দেওয়া মাত্র একজন নিরাপত্তারক্ষী। বৃহস্পতিবারে ঘাটালের এই সভায় পুরনো কথা বলতে গিয়েই মূলত ‘দল’ ও ‘নেত্রী’র কথা বলেন শুভেন্দু। কিন্তু এটাও মনে করিয়ে দিলেন, যে দলের জন্য তিনি কম করেননি। হয়তো আবেগে ভেসেই শুভেন্দু এক চাপা ক্ষোভের কথা বললেন ঘাটালের মানুষের সামনে।