এখন বিয়ের মরশুম চলছে। আর বিয়ে মানেই তো পাত পেড়ে ভুড়িভোজ থেকে নানা আচার–অনুষ্ঠান। আর বিয়ের আগে রীতি মেনেই পাত্র–পাত্রী দু’পক্ষকেই খাওয়ানো হয় আইবুড়ো ভাত। হবু বর–বউয়ের জন্য আত্মীয়স্বজন বাড়িতে আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করে। তবে এবার ঘটল ব্যতিক্রম। আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হল, তবে জায়গাটি পাল্টে গেল। আজ, শনিবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল তারকেশ্বর লোকাল। চলন্ত ট্রেনে হঠাৎই ভেসে এলে উলুধ্বনি, সানাইয়ের সুর। পাশের কামরায় থাকা যাত্রীরা উঁকি দিয়ে দেখেন, চলন্ত ট্রেনে খাওয়ানো হচ্ছে এক যুবককে। আর ট্রেনের কামরা সাজানো হয়েছে ফুল–বেলুন দিয়ে।
এদিকে ততক্ষণে ট্রেনের সবাই দেখতে পেল অন্যরকম আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান। এই অভিনব আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করা হয়েছিল চলন্ত ট্রেনে। ধুতি–পাঞ্জাবি পরা সেই যুবকের নাম অতনু শাসমল। বাহিরখন্ডের বাসিন্দা আগামী ১৫ ডিসেম্বর অতনু শাসমলের বিয়ে। তাই চলন্ত ট্রেনে অভিনব আঙ্গিকে আইবুড়ো ভাত খাওয়ালেন তাঁর সহযাত্রী বন্ধুরা। ডাউন তারকেশ্বর–হাওড়া লোকালে দেখলেন অন্যরা। মাছ, মাংস, মিষ্টি–সহ ১৯ রকমের পদ রান্না করে নিয়ে এসেছিলেন বন্ধুরা। ধুতি–পাঞ্জাবি পরিয়ে থালা সাজিয়ে বন্ধুকে খাওয়ান তাঁরা। এমন আইবুড়ো ভাত দেখে খুশি ট্রেনের বাকি যাত্রীরা।
অন্যদিকে রোজ ট্রেনে চড়ে তারকেশ্বর থেকে হাওড়া আসেন বহু যাত্রীই। হাওড়া স্টেশনে নেমে চলে যান নিজস্ব গন্তব্যে। আবার কাজ সেরে হাওড়া থেকে একইভাবে বাড়ি ফেরার পালা সাঙ্গ হয়। রোজকার এই জীবনে দৈনিক যাতায়াতের পথে এমন অনেক সহযাত্রীদের মধ্যে আলাপ, পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। যা হয়ে যায় একটা পরিবারের মতো। এভাবেই বাহিরখণ্ডের অতনু শাসমলের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ট্রেনের পিন্টু, সঞ্জয়, মিলন, রাজু, নির্মল, গোবিন্দ, মানিক–সহ অনেক যাত্রীদের। দৈনদিন যাতায়াতে এক আলাদা আত্মীয়তা তৈরি হয় তাঁদের মধ্যেও। পরিবারের বাইরে যেন এক আলাদা পরিবার।
আরও পড়ুন: শহরে বেআইনি পার্কিংয়ের বাড়বাড়ন্তের অভিযোগ, কলকাতা পুরসভা আনছে অ্যাপ
এছাড়া কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ব্যক্তিগত অনেক কথাই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন তাঁরা। একে অপরের সমস্যায় ঝাঁপিয়েও পড়েন। সেই বন্ধুরা মিলেই অতনুর জন্য সারপ্রাইজ আইবুড়ো ভাত গিফট দেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর অতনু শাসমলের বিয়ে হরিপাল নিবাসী পাত্রীর সঙ্গে। বিয়েতে ট্রেনের বন্ধুদেরও নিমন্ত্রণ করেছেন অতনু। আর এবার তাই বন্ধুকে সারপ্রাইজ দিয়ে ট্রেনেই করা হল আইবুড়ো ভাতের আয়োজন। এই বিষয়ে পিন্টু দে বলেন, ‘অতনু আগে থেকে কিছুই জানতেন না। আমরা বন্ধুরা সকলে মিলে এরকম একটা সারপ্রাইজ গিফট দিয়েছি।’ অতনুর কথায়, ‘আমার মুখে ভাষা নেই। এই উপহারে আমি খুশি। এভাবে আমার আইবুড়ো ভাত হবে ভাবতে পারিনি।’