গত দু'বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক পড়ুয়া পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অনেকেই রুজির টানে ভিন রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে, আবার অনেক পড়ুয়াকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরা। এই অবস্থায় রাজ্যে বাল্যবিবাহ নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য কল্যাণ মন্ত্রকের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বাল্যবিবাহে দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতা থেকে শুরু করে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি প্রভৃতি জেলাগুলিতে রাজ্যের মধ্যে বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বেশি। উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ রোধে একাধিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। তারপরেও বাল্যবিবাহে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে এক নম্বরে থাকায় উদ্বিগ্ন প্রশাসনের কর্তারা। বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার।
কেন্দ্রীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য কল্যাণ মন্ত্রকের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫ সাল এবং ২০১৯ সালে বাল্যবিবাহের হার একই ছিল। ২০১৯ সালে ২৪-২৫ বছরের যে সমস্ত মহিলাদের ১৮ বছরের নীচে বিয়ে হয়েছিল সেই সংখ্যাটা হল ৪১.৬ শতাংশ। তবে করোনা পরিস্থিতির পর বাল্যবিবাহের হার আরও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাল্যবিবাহ রোধে গতকাল ইউনিসেফের উদ্যোগে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের নারী শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। রাজ্যে বাল্যবিবাহ যে বেড়েছে সে কথা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতির পর রাজ্যে বাল্যবিবাহ কিছুটা বেড়েছে। অন্যান্য রাজ্যে সঠিক তথ্য দেওয়া হয় না কিন্তু আমরা সঠিক দিই। আমরা বাল্যবিবাহ রোধে নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহের হার বেশি হলেও বাল্যবিবাহ রোধে তৎপরতা দেশের মধ্যে এরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন ইউনিসেফের কর্তারা। কিন্তু, তারপরেও রাজ্যে বাল্যবিবাহ বেশি কেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে সমাজকর্মীরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি স্বাধীনচেতা। প্রেম করে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা এ রাজ্যেই বেশি। এই সমস্ত কারণে রাজ্যে বাল্যবিবাহের হার বেশি।