ভারতের ১০,০০০-এর বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সংস্থার উপর নজরদারি চালাচ্ছে শেংঝেনের এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। তালিকায় আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও। 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর সেই প্রতিবেদন নিযে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হলেন না মমতা। বরং জানালেন, বৈদেশিক বিষয়ে তাঁর নাক গলানোর প্রশ্নই ওঠে না। কেন্দ্রের উপর তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর তদন্তমূলক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজনীতি, সেনা, ক্রীড়া, শিল্পপতি, বিচারপতি থেকে শুরু করে আমলা, সাংবাদিক, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ-সহ ভিন্ন ভারতীয় সংস্থার উপর নজরদারি চালাচ্ছে শেনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড। এমনকী ওই সংস্থার নজরদারির তালিকায় আছে আর্থিক তছরূপ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, পাচারে জড়িত লোকজনরাও। যে সংস্থার সঙ্গে চিনা সরকার এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক আছে। একইসঙ্গে চিনা সেনা, চিনের গোয়েন্দা এবং সুরক্ষা এজেন্সির সঙ্গেও কাজ করে বলে দাবি করেছে শেনহুয়া।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং তাঁদের পরিবার থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং, রাজনাথ সিং, নির্মলা সীতারামন, পীযূষ গোয়েল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত, ভারতের তিন বাহিনীর কমপক্ষে ১৫ জন প্রাক্তন প্রধান, ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, শিল্পপতি রতন টাটা, গৌতম আদানিদের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। সচিন তেন্ডুলকর, শ্যাম বেনেগাল, মনমোহন সিংয়ের স্ত্রী, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী-সহ অন্যান্যরাও চিনা সংস্থার নজরদারিতে আছেন।
তবে নয়াদিল্লিতে চিনা দূতাবাসের এক সূত্র 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর কাছে দাবি করেছেন, ঘুরপথে বা স্থানীয় আইন ভঙ্গ করে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে অন্য কোনও দেশের তথ্য নিতে বলে না বেজিং। যদিও শেনহুয়ার সঙ্গে চিনা সেনার যোগ সংক্রান্ত বা অন্যান্য সরাসরি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিশেষত পূর্ব লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সেই নজরদারির খবর সামনে আসায় তা বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে।
তালিকায় মমতার নামও থাকায় সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। যদিও তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বরং তিনি বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছু বলব না। এই বিষয়ে আমার কাছে কোনও তথ্য নেই। বৈদেশিক বিষয়ে আমরা ভারত সরকারকে বিশ্বাস করি। তাতে আমি কোনও ব্যক্তিগত মতামত দিই না।’