একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ২১ লক্ষ শ্রমিকের বকেয়া টাকা ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে। এই ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় সরকারও চাপে পড়ে গিয়েছে। কারণ মনরেগা’র টাকা সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়ার কথা। সেটা রাজ্য সরকার দিচ্ছে মানে কেন্দ্রীয় সরকারের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আর রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ খরচের শংসাপত্র না দেওয়ার অভিযোগ করেছিল সিএজি। সেটার দায় বামেদের উপরে চাপিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ যে সালের উল্লেখ করা হয়েছে তখন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে আসেনি। বকেয়া টাকা মেটাবে রাজ্য সরকার কেমন করে? প্রশ্ন বিরোধীদের।
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা–মন্ত্রীদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিতে ব্যর্থ। আবার যখন রাজ্য সরকার মেটানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তখন বিরোধিতা করছে। এই তঞ্চকতার অর্থ কী? এই আবহেই রেড রোডে তৃণমূল কংগ্রেসের ধরনা চলছে। এই ধরনায় দলের সাংসদ–বিধায়ক–নেতাদের দেখা গেলেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। নয়াদিল্লির কাছে পাওনা আদায়ের দাবিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনের সামনে ধরনায় বসেন। তার পরে নেত্রীর নির্দেশে তা তিনি প্রত্যাহার করেন। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমোর ধরনা কর্মসূচি নেওয়ায় সেখানে অভিষেককে এখনও দেখা না যায়নি। যা নিয়ে শুরু গুঞ্জন।
অন্যদিকে এবার রাজ্য যাতে ঋণ নিতে না পারে তার জন্য নয়াদিল্লি গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সব ঠিক থাকলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নয়াদিল্লি সফরে যাবেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন দাবি করেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিজেপির আর্থিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড হাজার হাজার কোটি টাকার ইউসি জমা দেয়নি। বাংলায় মমতার সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে আর্থিক সন্ত্রাস চালাচ্ছে বিজেপি।’
আরও পড়ুন: সদ্যজাত সন্তানকে নিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল দুই নাবালিকা পরীক্ষার্থী, কোথায় ঘটল?
তবে বঙ্গ–বিজেপি যে চাপে পড়ে গিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘অর্থ দফতরের বাজেট শাখাকে ৭ তারিখের আগে অতিরিক্ত ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চোর–ঠিকাদারদের সেই টাকা দিয়ে লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে চাইছে তৃণমূল।’ পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘সিএজি রিপোর্টে ২০০২–০৩ থেকে ২০২০–২১ সময়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২০১০–১১ সাল পর্যন্ত বাংলায় ক্ষমতায় ছিল বামেরা। তৃণমূল তখনকার দায় নিতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নির্দিষ্ট সময়ে যাবতীয় শংসাপত্র জমা দিয়েছে।’ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বিজেপিকে তুলোধনা করে বলেছেন, ‘রাজ্যের মানুষ ১০০ দিনের টাকা থেকে বঞ্চিত। বিজেপি ও সিপিএম এই নিয়ে শুধু রাজনীতি করছে। ওরা চায় না গরিব জনগণ হকের টাকা পাক।’