টাকা আদায়ের জন্য ঘরে আটকে রেখে এক ব্যক্তিকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সংক্রান্ত মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। অভিযোগ ছিল, যারা মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারা যোগ করেনি পুলিশ। লঘু ধারায় মামলার রুজু করে পুলিশ তাদের আড়াল করেছে। এমনকী হাইকোর্টে মামলা করার জন্য মামলাকারীকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পুলিশ। সেই সমস্ত অভিযোগ শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। মঙ্গলবার এই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে ডেকে প্রবল ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশ্যে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘আপনি কি ভগবান হয়ে গেছেন যে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন!’
আরও পড়ুন: পোস্টিং বিক্রির অভিযোগ, মানিককে জেলে গিয়ে জেরার নির্দেশ দিলেন জাস্টিস গাঙ্গুলি
মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি নদিয়ার রানাঘাটের শান্তিপুরে। সেখানে টাকা আদায়ের জন্য এক ব্যক্তিকে মারধর করেছিল কয়েকজন অভিযুক্ত। সেই ঘটনায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলাকারী। পরে পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে। কিন্তু তারপরেও পুলিশ পদক্ষেপ না করায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি।কিন্তু মামলা করার পরেও বিপদে পড়েন ওই ব্যক্তি। পুলিশের তদন্তকারী অফিসার তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার তদন্তকারী অফিসার আদালতে হাজিরা দেন। তাঁর উদ্দেশ্যে বিচারপতি ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেন, ‘আপনি কি এতটাই ক্ষমতাবান হয়ে গিয়েছেন যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবেন? আপনি কি ভগবান হয়ে গিয়েছেন যে মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন? এইভাবে কোনও তদন্ত হতে পারে না। এরপর তদন্তকারী অফিসারকে তুলোধোনা করেন বিচারপতি। তদন্তের নথি অফিসারের হাতে দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘আপনি ভালো করে অভিযোগ পড়ুন আর ভারতীয় দণ্ডবিধি দেখে বলুন এখানে কোন কোন ধারা যোগ করা প্রয়োজন ছিল।’
উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালতের ধারণা, এই মারধরের ঘটনায় বেশ কিছু ধারা ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। জামিন যোগ্য ধারা দিয়ে বিষয়টিকে লঘু করে দেখা হয়েছে। অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে পুলিশ। বিচারপতির মন্তব্য, ‘পুলিশের এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুলিশ নিজেই এই মিথ্যে রিপোর্ট তৈরি করেছে। এরপর আইসিকে বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন তিনি তদন্ত করতে পারবেন কিনা। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশ রানাঘাট পুলিশ সুপারের নজরদারিতে এই মামলার তদন্ত করবেন আইসি। ১৬ অগাস্টের মধ্যে এ নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।