দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে কলকাতা হাইকোর্টে স্বস্তি পেলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করার জন্য আবেদন জানানো হয় আদালতে। সেটা খারিজ হয়ে গেল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় যখন বিজেপি বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছিল, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর পুলিশের উদ্দেশে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা বলে অভিযোগ ওঠে। তারপরই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল যাদবপুর থানার পুলিশ। কিন্তু এফআইআর করার আর্জি খারিজ করে দিল বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ।
আজ, বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। আর বিচারপতি বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর করতে পারবে না পুলিশ।’ গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় প্রথম বর্ষের ছাত্রের। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর আগে তাদের ছেলেকে র্যাগিং করা হয়েছিল। মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করা হয় বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। রাজ্য–রাজনীতি তোলপাড় হয়ে যায় এই ঘটনায়। তারপরই সেখানে বিজেপি বিক্ষোভ দেখায় এবং কড়া মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা। তা নিয়ে পুলিশ কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে।
কেন এমন রায় আদালতের? এই ঘটনা নিয়ে চলে শুনানি। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, শুভেন্দু অধিকারী ওইদিন যে মন্তব্য করেছেন সেটা নির্দিষ্ট কারও উদ্দেশে নয়। খুব সাধারণভাবে ব্যবহার করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তবে এমন পদমর্যাদার মানুষদের পাবলিক প্লেসে এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয় বলেও সতর্ক করে দেন বিচারপতি। বিচারপতির কথায়, এমন মন্তব্য ওই ব্যক্তির পদের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা তৈরি হতে পারে। এইসব দিক বিচার করে শুভেন্দু অধিকারীর সেদিনের মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার কোনও ধারা প্রয়োগ করা যায় না। পুলিশের যদিও অভিযোগ ছিল, তাদের উদ্দেশে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার অনুমতি নিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে যাদবপুর থানা।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ গণধর্ষণ মামলায় চারজনের আমৃত্যু জেল, শরীরে আঁকা উল্কিই ধর্ষকদের চিনিয়ে দিল
আর কী জানা যাচ্ছে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্ট। তখন আদালত বলেছিল, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে এফআইআর করা যাবে। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হন শুভেন্দু। গত অগস্ট মাসে সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ। আর এফআইআর করার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আর আজ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, ‘শুভেন্দু যা মন্তব্য করেছেন সেটার ভিত্তিতে ফৌজদারি ধারায় মামলা প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাঁরও এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি। ভবিষ্যতে তাঁকে আরও সংযত হতে হবে।’