কয়লা পাচার কাণ্ডের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইতিমধ্যেই তারা অনেক তথ্য জোগাড় করেছে। কয়লা পাচারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত অনুপ মাঝি ওরফে লালা। তবে এই লালা একটি ডায়েরি ব্যবহার করত। যেখানে কয়লা পাচারের নানা তথ্য লেখা রয়েছে। একাধিক ব্যক্তির নাম লেখা রয়েছে। আবার কাকে, কত টাকা দেওয়া হয়েছে সেসব তথ্যও রয়েছে। এই ডায়েরি এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অফিসারদের হাতে। লালার এই ডায়েরিতে একটা নাম বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে ইডি কর্তাদের। কারণ সেই নাম একজন পুলিশকর্তার। তবে তিনি যে সে পুলিশকর্তা নন। একদিকে প্রভাবশালী অপরদিকে বলিউডের এক অভিনেতার নামের সঙ্গে মিল আছে। ইডি সূত্রে খবর, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লালার সঙ্গে অন্তত আট কোটি টাকার লেনদেনের নথি রয়েছে তাঁর নামে।
এদিকে এই তথ্যের সঙ্গে নাম হাতে পেয়ে ইডি অফিসাররা বেশ চাপে পড়েছেন। কারণ এমনটা হতে পারে সেটা তাঁরা কল্পনাও করতে পারছেন না। বিষয়টি সম্প্রতি লিখিত আকারে আদালতে জানিয়েছে ইডি। লালার ডায়েরির পাতায় ওই নাম দেখতে পেয়ে বেশ কয়েকজন হিসাবরক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই হিসাবরক্ষকরা লালার সংস্থার সঙ্গেই জড়িত। তখনই এই পুলিশকর্তার বিষয়টিতে সিলমোহর পড়ে। এই পুলিশকর্তা একদা বীরভূমে দায়িত্বে ছিলেন। বীরভূমে থাকাকালীন লালার সঙ্গে তাঁর লেনদেন ও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। অধুনা অন্য জেলায় বদলি হলেও লালার কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আসত তাঁর কাছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
অন্যদিকে ওই পুলিশকর্তা–লালার যোগাযোগ এবং লেনদেন নিয়ে যাবতীয় নথি এবং তথ্যপ্রমাণ কদিন আগেই নয়াদিল্লিতে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে জমা দিয়েছে ইডি। সেখান থেকে নির্দেশ আসার পরই ওই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। আর বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ একজোট করা হচ্ছে। ওই পুলিশকর্তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিস করা হচ্ছে। সব জোগাড় হয়ে হাতে এলে তাঁকে তলব করা হবে। যাতে কোনওভাবেই বেরিয়ে যেতে না পারে। কারণ এই পুলিশকর্তা অত্যন্ত ধূর্ত। তাছাড়া আগে নানা ঘটনা ঘটালেও তাঁকে ছোঁয়া যায়নি। তাই কোনও ‘মিস ফায়ার’ হোক চাইছেন না ইডির তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সময়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন’, মহার্ঘভাতা নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শতাব্দীর
এছাড়া যে তথ্য ইডির হাতে এসেছে তাঁকে যুৎসই করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে ২০১৫–২০২০ সাল পর্যন্ত কয়লা পাচারে রাজ্য পুলিশের অনেক মাথারা জড়িত। এই জড়ানোর কাজেও মাধ্যম হয়েছে ওই প্রভাবশালী পুলিশকর্তা। লালার ডায়েরিতে যাঁর নাম লেখা রয়েছে। তবে এই কয়লা পাচার কাণ্ডে ১০ জন পুলিশকর্তা ও ২২ জন পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেখান থেকেও নানা তথ্য উঠে এসেছে। আর যে নথি হাতে এসেছে তা সব আদালতে জমা করে দেওয়া হয়েছে। এবার অপেক্ষা করা হচ্ছে আদালতের নির্দেশের। সেটা পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।