সিপিআইএম এখন পুরনো ধ্যান–ধারণা ছেড়ে স্মার্ট হয়েছে। কারণ যুগটাই এখন স্মার্ট। মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি অ্যাকটিভ থাকেন। হাতে স্মার্টফোন প্রায় সকলেরই রয়েছে। সিপিআইএমও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ হয়ে উঠেছে। তারা ফেসবুক, টুইটারের মতো নেটমাধ্যমে নানা বিষয় তুলে ধরছেন। কিন্তু এখানে দেখা গিয়েছে বিপত্তি। দেখা গিয়েছে, বেশকিছু নেতা–নেত্রীর এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম চালান অনুগামীরা। আর তাঁদের মধ্যে থেকেই একটি পোস্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যার জেরে এবার কোপ পড়েছে দলের নেতাদের উপর। দলের রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অনুগামীদের চালানো ‘ফ্যান পেজ’ রাখা যাবে না।
ঠিক কী ঘটেছে? দলীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি সিপিআইএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের নামে চলা ফেসবুক পেজ ‘মীনাক্ষি মুখার্জি অফিসিয়াল’ থেকে একটি পোস্ট বিতর্ক তৈরি করেছে। একুশের নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনের প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর নামে তৈরি ‘ফ্যান পেজ’–এ সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড নিয়ে পোস্ট করা হয়। আর তাতেই তোলপাড় হয়ে গিয়েছে জোটে থাকা কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিআইএমের সম্পর্ক। কারণ সেখানে কংগ্রেস সম্পর্কে নানা কড়া মন্তব্য করা হয়েছিল। পাল্টা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচনী লড়াই করা সত্বেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিষোদ্বগার কেন? অস্বস্তি কাটাতে আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটের নির্দেশে ‘মীনাক্ষী মুখার্জি অফিসিয়াল’ ফেসবুক পেজ থেকে বিতর্কিত পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। এমনকী নেটমাধ্যমে দলের নেতা–নেত্রীদের পোস্ট নিয়ন্ত্রণ করার ভাবনা চিন্তা শুরু হয়। তারপরেই আসে এই নির্দেশ। যার ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিই কী সিপিআইএম স্মার্ট হতে পেরেছে? যাঁরা এককালে রাজ্যে কম্পিউটার ঢুকতে দেবেন না বলেছিলেন তাঁরা কী যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পেরেছেন?
একুশের নির্বাচনের সময় মিনাক্ষির পাশাপাশি শতরূপ ঘোষ, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষ, সৃজন ভট্টাচার্য, সায়নদীপ মিত্রর মতো প্রার্থীদের অনেকেই ‘ফ্যান পেজ’ চালু করে। মুজফফর আহমেদ ভবন সূত্রে খবর, মীনাক্ষির ঘটনায় বিতর্কের পর থেকেই রাশ টানার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। এমনকী দলের ছাত্র–যুব সংগঠনের যাঁদের নামে এমন সব পেজ রয়েছে, তাঁদের তা বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। ফেসবুক লাইভে এই বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে বলে খবর।
এই তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘এমন পেজ যাঁরা করে থাকেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের তা জানা থাকে না। তবে আমার ক্ষেত্রে একটিমাত্র পেজ রয়েছে যাঁর অ্যাডমিনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আমি তাঁকে পেজটি বন্ধ করতে বলেছি।’ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেই এই বিষয়ে দল নির্দেশ দিয়েছিল। তবে এখন এই সিদ্ধান্তে জোর দেওয়া নিয়ে দলের অন্দরেই চর্চা তুঙ্গে।