রাজনীতিতে হাত পাকালেও আসলে তিনি অর্থনীতি ও গণিতের ছাত্রী। সোমবার এক ভিডিয়ো বার্তায় সেটাই বোঝালেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বোঝালেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নকে ভাবতে হয় কী করে। পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা কেন খরচ হয় না, তার ময়নাতদন্ত করলেন তিনি। বললেন, ক্ষুদ্র রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কী করে সবার জন্য উন্নয়নে সামিল হতে হয় তা শিখতে হবে আমাদের।
দীর্ঘদিন বিদেশে থেকেছেন। বিদেশি সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ করতে নেমেছেন রাজনীতির ময়দানে। নিউ ইয়র্ক, লন্ডনের মতো শহরে চাকরি করে নদিয়ার করিমপুরের মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ভোটে লড়তে দুবার ভাবেননি। সফল ভাবে সেই দায়িত্ব পালনের পর মহুয়াকে সংসদে পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগর থেকে জিতে মমতার মুখ রেখেছেন তিনি।
বহুজাতিক সংস্থার বোর্ড মিটিং হোক বা সংসদের কক্ষ, কিংবা নদিয়ার কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম, বক্তা হিসাবে মহুয়া সব জায়গাতেই অপ্রতিরোধ্য। এদিনও দেখা গেল তাঁর সেই রূপ। নরমে গরমে বোঝালেন কেন, টাকা পড়ে থাকলেও কাজ হচ্ছে না পঞ্চায়েতে।
এদিন মহুয়া বলেন, প্রতি বছর ISGP প্রকল্পে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ১ – ২ কোটি টাকা পেয়ে থাকে। কিন্তু তার ৬০ শতাংশই খরচ করতে পারে না তারা। কারণ, পঞ্চায়েতের তরফে কোনও বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না।
কেন বড় প্রকল্প গ্রহণ করে না পঞ্চায়েত? কারণ ব্যাখ্যা করে মহুয়া বলেন, ‘সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে ৫ লক্ষ টাকার বেশি দামি দরপত্র আহ্বান করতে গেলে তা অনলাইনে করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এই ঝামেলায় পড়তে চায় না কেউ। অধিকাংশ জায়গায় পরিকাঠামো নেই। কোথাও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়নি। কোথাও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয়েছে তো ডিজিটাল সিগন্যাল তার সঙ্গে সংযুক্ত নয়।’
মহুয়া বলেন, ‘ই-টেন্ডার এড়ানোর জন্য ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করছে পঞ্চায়েতগুলি। আর সেই টাকা ভাগ হচ্ছে নিজেদেরই মধ্যে। প্রকল্পের খরচ কমানোর জন্য ৫০ লক্ষ টাকার কাজ হচ্ছে ২৫টি প্রকল্পে। এক একটি প্রকল্পে তৈরি হচ্ছে ৬০ মিটার করে রাস্তা।’ সাংসদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ঠিক মতো খরচ করলে গ্রামে একটাও কাঁচা রাস্তা থাকার কথা নয়।’
সঙ্গে মহুয়া এও জানিয়েছেন, ‘তাঁর বক্তব্যকে হাতিয়ার করে বিরোধীরা প্রচার করতেই পারে। কিন্তু দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে একথা বলছেন তিনি।’
মহুয়ার এই বক্তব্যে পক্ষে বিপক্ষে মুখ খুলেছেন অনেকেই। একদলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ রাজনীতি কী ভাবে কনট্রাক্টর রাজ ও সিন্ডিকেট রাজের আবর্তে জড়িয়ে গিয়েছে সাংসদ হওয়ার পর বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই বুঝে গিয়েছেন দক্ষ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার মহুয়া। আর এতে যে মানুষের বৃহত্তর স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তা বুঝেই উৎকণ্ঠিত তিনি।
পালটা আরেকদলের দাবি, নদিয়ায় প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে। এভাবে মুখ খুলে নিজের দলের জনপ্রতিনিধিদেরই অকর্মণ্য প্রমাণ করলেন সাংসদ।
বিরোধীদের অভিযোগ, ই-টেন্ডার করলে কাটমানি নেওয়া যাবে না। তাই ছোট ছোট প্রকল্পে কাজ করিয়ে কাটমানি খাচ্ছে তৃণমূল। তাদের দীর্ঘদিনের এই অভিযোগে শিলমোহর দিলেন দলেরই সাংসদ মহুয়া মৈত্র।