সদ্য দোল উৎসব গিয়েছে। এখন গা থেকে অনেকের রঙ ওঠেনি। এটা রঙের উৎসব। তাই একে অন্যকে রাঙিয়ে দেবে সেটাই দস্তুর। তবে দোলে রঙ মাখাতে গিয়ে বেজায় চাপে পড়ে গেলেন সংশোধনাগারের বন্দিরা। কারণ তাঁদের অপরাধ একটাই—তাঁরা প্রাক্তন দুই মন্ত্রীকে রঙ মাখাতে গিয়েছিলেন। তাতেই রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বেদম বকাঝকা করেন বন্দিদের বলে সূত্রের খবর। দোলের দিন কয়েকজন বন্দি রঙ মাখাতে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। বন্দিরা বলেন, ‘দাদা, হ্যাপি দোল’। আর সোমবার সকালে জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কপালে আবির দিতে যায়। ব্যস, খেপে ওঠেন প্রাক্তন মন্ত্রী দু’জন। জেল সূত্রে খবর, পার্থ চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘এখান থেকে গেলি, সব পাকা ছেলেপুলে, সাহস তো কম না।’ আর জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘ভাই, ভাল কথায় বলছি, মন মেজাজ ঠিক নেই, এখান থেকে যা দয়া করে।’
কিন্তু যেতে বললেই কি যাওয়া যায়! বন্দিরা আবির মাখিয়ে তবেই যাবেন বলে জানিয়ে দেন দুই মন্ত্রীকে। এমনকী এতে মন ভাল হয়ে যাবে বলে জানান বন্দিরা। তখন ওই বন্দিরা বলতে থাকেন, ‘দাদা, মন খারাপ করলে চলবে? দোলের দিন একটু আবির খেলা হবে না?’ অন্য বন্দিরা গান জুড়ে দেন, খেলব হোলি রঙ দেবো না তাই কখনও হয়। এসব দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দুই প্রাক্তন মন্ত্রী। তখন আর বন্দিরা কথা না বাড়িয়ে সরে পড়েন। তবে যাওয়ার আগে আবার বলে ওঠেন, ‘দাদা হ্যাপি দোল’। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন কয়েকজন কারারক্ষী। তাঁদের দেখেই ক্ষোভের সঙ্গে পার্থ–বালু বলেন, ‘এসবের মানে কী? দেখার এখানে কেউ নেই।’
আরও পড়ুন: বাঙুর হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ জিএসআইয়ের প্রাক্তন কর্মী, খোঁজ শুরু করল লালবাজার
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রাক্তন মন্ত্রীদের শান্ত করেন কারারক্ষীরা। পার্থ–বালুকে ওই কারারক্ষীরা বলেন, ‘আপনারা শান্ত হন। আমরা বিষয়টি দেখে নিচ্ছি।’ এই কথা শোনার পর তাঁরা চুপ করে বসে পড়েন। বালুর চোখে জল দেখা গিয়েছিল বলে সূত্রের খবর। এই দুই প্রাক্তন মন্ত্রী যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন এই বিশেষ দিনটিতে তাঁদের ঘিরে থাকতেন দলীয় কর্মীরা। সেসব কথা ভেবে উপরের দিকে তাকান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন। কারণ সেসব তো অতীত। এখন তো সেই সোনালি দিন আর নেই। কেউ আর তাঁদের শ্রদ্ধা জানান না আবির–মিষ্টি দিয়ে। এখন তাঁরা দু’জনেই জেলবন্দি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জেল হেফাজতে আছেন দীর্ঘদিন।
এসবের মধ্যেও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অসুস্থ। তাই তিনি কয়েকবার জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জামিন পাননি। তাঁদের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে সমাজের বুকে। অথচ এখনও প্রমাণ হয়নি তাঁরা দোষী। এই অবস্থায় কাটাতে হচ্ছে জেলের অন্ধকার সেলে। যা একেবারেই তাঁদের পছন্দ নয়। আর তাই দু’জনেই ভীষণ বিরক্ত হয়ে আছেন। রাজনীতি করতে এসে এভাবে জেলে থাকতে হবে তা কেউ ভাবেননি। তাই দোল উৎসবে তাঁদের মধ্যে আনন্দ নেই। সেখানে হঠাৎ কয়েকজন বন্দি তাঁদের আবির মাখাতে আসায় মেজাজ হারান দু’জনেই।