লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প রাজ্য–রাজনীতিতে যেমন টার্নিং পয়েন্ট, তেমনই বাংলার ঘরে ঘরে মহিলাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখন বিরোধীরাও ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্পে বেশি টাকা দেওয়া হবে বলে জানাতে শুরু করেছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের উপরই ভরসা রেখেছে গ্রামবাংলার মানুষজন। এমন আবহে বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। আজ, শুক্রবার বিধানসভায় ডেবরার বিধায়ক হঠাৎ জানতে চান, তফসিলি জাতি–উপজাতি মহিলাদের মতো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের অর্থ ১০০০ টাকা দেওয়া হবে কি না? এই প্রশ্ন যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলে দেয় শাসকদল তৃণমূলকেই। বিজেপি বলছে এটা সেমসাইড গোল।
এদিকে বিধানসভায় ওই বিধায়কের প্রশ্নের জবাব দেন রাজ্যের শিল্প বাণিজ্য তথা নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। মন্ত্রী শশী পাঁজার উত্তর, ‘ধর্মীয়ভাবে এটা করা হয় না। এটা প্রান্তিক মানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী করেছেন। এই মুহূর্তে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তার সংখ্যা ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৩ জন।’ পাল্টা বিধায়ক প্রতীচী ট্রাস্টের একটি রিপোর্ট তুলে বলেন, ‘মুসলমান মহিলাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না। পঞ্চায়েতের ভোট প্রচারে গিয়ে জানতে পেরেছিলাম এবং মুসলমান মহিলারা বলেছিলেন, ‘আমরা তো ভোট দিই। আমরা ৫০০ টাকা পাচ্ছি। তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলারা ১০০০ টাকা পাচ্ছে। আমি বুঝেছি এটা ধর্মীয়ভাবে হয় না। অন্তত ওবিসি মুসলমান মহিলাদের জন্য ১০০০ টাকা করে দেওয়া হোক।’
অন্যদিকে শশী পাঁজা বিধানসভায় বিধায়ককে বলেন, ‘উনি অন্য কোনও দলের থেকে রাজনৈতিক ব্যাখ্যা শুনে থাকতে পারেন। এটা কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্দিষ্ট মাপকাঠি অনুসারে সকলকে দেওয়া হচ্ছে।’ আর বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনি অমর্ত্য সেনের রিপোর্টের কথা বলছেন। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উল্লিখিত রিপোর্টটি আপনি টেবিলে জমা দেবেন।’ তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, অন্যান্য বর্ষীয়ান বিধায়করা হুমায়ুন কবীরকে জানান লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। তাই এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে পরিষদীয় দলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: এনডিএ সাংসদদের বৈঠকে ডাক সুকান্ত–দিলীপকে, কী নিয়ে হিসাব কষা চলবে?
আর কী জানা যাচ্ছে? শাসকদলের বিধায়কের এমন প্রশ্ন দেখে আপ্লুত বিজেপি। তারা এই সুযোগ ছাড়তে চায়নি। তাই বিজেপির ভগবানপুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি সুযোগ বুঝে বিধানসভায় বলেন, ‘তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বিধানসভায় যে দাবি তুলেছেন সেটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই সরকার বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করছেন। আর তাদের উন্নয়ন সরকারপক্ষ নিজেই চাইছে না। তাই যে প্রস্তাব তৃণমূল বিধায়ক তুলে ধরেছেন, সেই প্রস্তাব যদি এই সরকার মেনে না নেয়, তাহলে সংখ্যালঘুদের কাছে এই সরকারের আসল রূপ প্রকাশ পাবে।’