খিদিরপুর উড়ালপুল থেকে ফ্যান্সি মার্কেটের দিকে এগোলেই বাঁদিকে পড়বে একটি জরাজীর্ণ বাড়ি। শতাব্দী প্রাচীন ইমারত হলেও সেটি এখন ভগ্নদশা। আগাছা, ডালপালা সেই বাড়ির রংচটা দেওয়ালে সাক্ষ্য বহন করছে। এই বাড়ির নীচে একাধিক দোকান রয়েছে। তার মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বাড়িটি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের।
ঠিক কী ঘটেছে খিদিরপুরে? স্থানীয় সূত্রে খবর, মহাকবির কোনও উত্তরাধিকারী এখানে থাকেন না। নানা হাতবদল হয়ে বাড়ির মালিক এখন অন্য কেউ। এখন যিনি মালিক তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে এখানে শপিং মল করতে চাইছেন। তবে বাড়িটি কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ তালিকাভুক্ত হওয়ায় এখনও সেটা করা যায়নি। কলকাতা পুরসভার নথি থেকে জানা যাচ্ছে, ২০ এ, বি এবং সি—এই তিনটি ঠিকানায় বিভক্ত বাড়িটি। কিন্তু হেরিটেজ তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেন মধুকবির বাড়ি সংরক্ষণ হবে না? উঠছে সেই প্রশ্ন। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, হেরিটেজ আইন অনুসারে যা যা করা যায়, সেটাই করা হবে। সংরক্ষণের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।
বাড়িটির ইতিহাস ঠিক কী? এই বাড়ির একটি ইতিহাস আছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, রাজনারায়ণ দত্ত যখন যশোর থেকে কলকাতায় ওকালতি করতে আসেন তখন তাঁর ছেলে মধুসূদনের বয়স সাত বছর। আর এখানে এসে রাজনারায়ণ দত্ত খিদিরপুরের এই বাড়িটি কেনেন। ছোট ভাই মহেন্দ্রনারায়ণের অকালমৃত্যুর পর মা জাহ্নবীদেবীর সঙ্গে মধুসূদন খিদিরপুরের এই বাড়িতে বসবাস করতেন। এখান থেকেই তিনি স্কুল, কলেজের পড়াশোনা সমাপ্ত করে ইংরেজি কাব্যচর্চা শুরু করেছিলেন এই বাড়ি থেকেই। তৎকালীন কবির একাধিক চিঠিতে খিদিরপুরের এই বাড়ির উল্লেখ রয়েছে। তবে বাবার মনোনীত পাত্রীকে বিয়ে করতে আপত্তি জানিয়ে মধুসূদন এই বাড়ি ছেড়ে ফোর্ট উইলিয়ামে চলে যান। গ্রহণ করেন খ্রিস্টধর্ম। তারপর মধুসূদন আর কখনও খিদিরপুরের বাড়িতে ফেরেননি।
আর কী জানা যাচ্ছে? জানা গিয়েছে, সাত হাজার টাকায় বাড়িটি মাইকেল বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাল্যবন্ধু রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তারপর বাড়িটির আবারও হাতবদল হয়। এখন বাড়ির নীচে একাধিক দোকান আছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, ‘বাড়িটি ভেঙে সেখানে শপিং মল করার পরিকল্পনা চলছে। তাই হেরিটেজ বাড়ির তকমা সরিয়ে দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো কবির স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি পুনরুদ্ধার করে যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণ করা হোক।’