করোনা আবহে সামাজিক দূরত্ব, শারীরিক দূরত্বের নিয়মবিধিতে আরও দূরে সরে গিয়েছে মানুষ। এটা অনেকেরই আক্ষেপ। আর এরই মধ্যে ‘মানুষ মানুষের জন্য’— এই কথা মনে করিয়ে দিলেন উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সংগ্রাম ভট্টাচার্যের পরিবারের সদস্যরা। বাইক দুর্ঘটনার জেরে ব্রেনডেথের পর তাঁর হার্ট, দুটি কিডনি, লিভার, চোখ ও ত্বক দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই দুঃসহ সময়ে নজির গড়লেন তাঁরা। করোনা আবহে প্রথম ও চলতি বছরে তৃতীয় ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটল কলকাতায়।
মাত্র ৩১ বছর বয়সে সংগ্রামের জীবনসংগ্রাম থেমে গেলেও অন্য অনেকের থেমে থাকা জীবন শুরু হল। তাঁর হৃদযন্ত্র পেল হাওড়ার নারায়ণা সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের রোগী পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ১৭ বছরের এক কিশোরী। সংগ্রামের কর্নিয়া দান করা হয় দিশা আই হাসপাতালে। দাতার একটি কিডনি পান লিলুয়ার বাসিন্দা ২৯ বছরের এক যুবক। অপর কিডনি চলে যায় এসএসকেএম হাসপাতালে। এই হাসপাতালেরই স্কিন ব্যাঙ্কে দান করা হয়েছে তাঁর ত্বক। সংগ্রামের লিভার ত্রিপুরার আগরতলার বাসিনদা ৫৯ বছরের এক ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
মাত্র ৩ বছর আগে বিয়ে করেন পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ সংগ্রাম। তাঁর স্ত্রী আহেলী ভট্টাচার্য জানান, মৃত্যুর পরে দেহ এবং অঙ্গদান করতে চেয়েছিলেন স্বামী। ১৪ অগস্ট দুপুরে এক চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে বাইকে কল্যাণী গিয়েছিলেন সংগ্রাম। বাড়ি ফেরার পথে নদিয়ার জাগুলিয়ার কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। জানা গিয়েছে, তিনি বাইকের স্ট্যান্ড তুলতে ভুলে গিয়েছিলেন। বাম্পারের সঙ্গে ওই স্ট্যান্ডের সঙ্ঘর্ষ হওয়ায় তিনি আচমকা রাস্তায় ছিটকে যান। হেলমেট ঠিকমতো না পরায় সেটিও খুলে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। ভেন্টিলেশনে রাখা হলেও তাঁর কোনও অবস্থার উন্নতি না দেখে ১৬ অগস্ট ব্রেনডেথের কথা ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তাঁর শোকার্ত পরিবার সংগ্রামের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে অঙ্গদানে সম্মতি জানান। শুরু হয় অঙ্গদানের প্রক্রিয়া। না থেকেও রয়ে গেলেন সংগ্রাম।