৬ মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ৪ মাসের মধ্যেই সেই এসএসসি নিয়োগ মামলার রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। এদিকে যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তাদের ১২ শতাংশ হারে সুদ সমেত বেতন ফেরাতে হবে। এই আবহে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। এমনই দাবি করা হয়েছে নিউজ ১৮-এর এক প্রতিবেদনে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, সব চাকরি বাতিল না করলেই পারত হাই কোর্ট। সিবিআই তদন্তে যে সব চাকরি বেআইনি বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেই চাকরিপ্রাপকদেরই নিয়োগ বাতিল করা যেত। এদিকে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, তারা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। তাঁর বক্তব্য, পাঁচ হাজার অভিযুক্তর জন্য ২৬ হাজারের চাকরি কেন যাবে?
সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, 'রায়ের কপি পেলেই মুভ করব। কী গ্রাউন্ডে অ্যাপিল কব, সেটা পরে জানাব।' তাঁর কথায়, 'এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সিবিআই তদন্ত চলেছে। ৫০০০ নিয়োগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল সিবিআই। এগুলির নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ ছিল। বাকি প্রায় ১৯ হাজারের নামে কী অভিযোগ? তাদের কেন চাকরি গেল? এখনও পরিস্কার নয়। তাই রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছি। স্কুলে শুন্যতা কীভাবে পূরণ হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমি আদালতের এই রায়ে অসন্তুষ্ট। রায়ের কপি হাতে পেয়ে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মুভ করব। ওএমআর শিটের পুনর্মূল্যায়ণ করার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও গাইডলাইন নেই। ৩৫০টির বেশি মামলা হয়েছে। ফলে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।' এরপর তিনি বলেন, 'নতুন নিয়োগ শুরু নিয়ে বা তার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। নিয়োগ করাই তো আমাদের কাজ। সরকার নির্দেশ দিলে প্রক্রিয়া শুরু করব। কিন্তু আদালত জানিয়েছে ফ্রেশ নিয়োগ নয়। ওএমআর পুনর্মূল্যায়ণ। আমরা সিবিআইয়ের থেকে হার্ড ডিস্ক নিয়ে দেখব সেখানে কী কী পাওয়া যায়।'
এদিকে চাকরিপ্রাপকদের হয়ে মামলা লড়া আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায় নিয়ে বলেন, 'এই রায় পুরোপুরি ত্রুটিপূর্ণ। এই মামলায় আসল বিষয়টি বুঝতে পারেনি হাই কোর্ট। আমি আশা করে, পাঁচ মিনিটে এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেবে সপ্রিম কোর্ট।' সিবিআই যে প্রক্রিয়ায় এসএসসি মামলার তদন্ত করেছে, তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সবির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রায়দান করে বলে, ২০১৬ সালে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দ্বাদশে নিয়োগ পাওয়া এসএসসি চাকরিপ্রাপকদের সবার চাকরি বাতিল হবে। পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলে, মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের চাকরি বৈধ হতে পারে না। অন্যদিকে চাকরিহারাদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে সব বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রাপ্ত বেতনের ওপর ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে চাকরিহারাদের। এর জন্যে চাকরিহারাদের ৪ সপ্তাহ সময় দিয়েছে হাই কোর্ট। এই টাকা জেলাশাসকের কাছে জমা করতে হবে তাঁদের। পরে জেলাশাসক পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা হাই কোর্টে জমা দেবেন।
এদিকে সব নিয়োগ বাতিল হলেও একজনকে চাকরিতে বহাল রাখার কথা জানিয়েছে উচ্চ আদালত। হাই কোর্টে আজ বিচারপতি বসাক জানান, সোমা দাস নামক এক ক্যানসার আক্রান্ত চাকরিপ্রাপককে মানবিক কারণে চাকরিতে বহাল রাখা হবে। অপরদিকে এসএসসি-কে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুরও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর ওমএমআর শিট পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলল আদালত। এর পাশাপাশি এসএসসির সার্ভারে দ্রুত ওএমআর শিট আপলোড করতে বলেছে হাই কোর্ট। এদিকে হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত জারি রাখবে সিবিআই। নির্দেশে বলা হয়েছে, 'যাকে প্রয়োজন, তাকেই হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই'।