লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজ্যসভা ভোটের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিশিষ্ট সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ, প্রাক্তন সাংসদ মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি মমতাবালা ঠাকুর, সুস্মিতা দেব এবং মহম্মদ নাদিমুল হককে প্রার্থী করা হয়েছে। যে চারটি আসনে জয় নিশ্চিত তৃণমূলের। শান্তনু সেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা (সদর) তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী এবং আবিররঞ্জন বিশ্বাসকে আর ভোট প্রার্থী করা হয়নি। আর সেই তালিকা দেখে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজ্যসভা ভোটের জন্য প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করলেও আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে রয়েছে লোকসভা ভোট। সেক্ষেত্রে দুই ‘ম’ - মহিলা এবং মতুয়ার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আর সেই ‘ম’-র সংযোগেই লোকসভা ভোটে তৃণমূল বিজেপিকে মাত দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
কোন অঙ্কে? রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তৃণমূলের চারজন প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই মহিলা। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে যে তৃণমূল জিতেছিল, তাতে মহিলা ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় ভূমিকা ছিল। আর নরেন্দ্র মোদীর মহিলা ভোটব্যাঙ্কও বেশ শক্তিশালী। সেই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের দিকে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল ও বিজেপি। যা ইতিমধ্যে দু'দলের প্রচারে উঠে এসেছে। আর তারই অঙ্গ হিসেবে সংসদের উচ্চকক্ষে তিনজন মহিলাকে প্রার্থী করল ঘাসফুল শিবির।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় ‘ম’-র অঙ্ক হিসেব মমতাবালাকে প্রার্থী করে লোকসভা ভোটের আগে মতুয়া সমাজকে বড় বার্তা দিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে মতুয়ারা পুরোপুরি বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। তার জেরে বনগাঁ, রানাঘাটের মতো জায়গায় দাঁড়াতেই পারেনি তৃণমূল। ফুটেছিল পদ্মফুল। কিন্তু যে আশায় বিজেপিকে উজাড় করে ভোট দিয়েছিলেন, তা পূরণ না হওয়ায় ২০২১ সালে মতুয়াদের কিছুটা মোহভঙ্গ হয়েছিল। তৃণমূলের ঝুলিতে ফিরেছিল মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক।
এবার লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোটব্যাঙ্ক আরও মজবুত করতে মরিয়া তৃণমূল। বিজেপিও ছেড়ে দিতে রাজি নয়। এবার লোকসভা নির্বাচনে মতুয়ারা কোন পথে হাঁটেন, সেদিকে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল বা বিজেপি - দু'দলই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মরিয়া। তারইমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করে দিয়েছেন যে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হবে। যে আশায় পাঁচ বছর আগে বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক ভরিয়ে দিয়েছিলেন মতুয়ারা। তার পালটা হিসেবে মমতাবালাকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করে পালটা তৃণমূল বার্তা দিতে চাইল যে আদতে মতুয়াদের 'মমতা' দেয় ঘাসফুল শিবিরই।