তাঁকে নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে ভিডিয়ো। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই একেবারে অন্তরালে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর ক্রিস্টিনা মেরি। ফোনও বন্ধ। তারইমধ্যে ক্রিস্টিনার সহকর্মীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে টাচ করে কোনও ভুল করেননি ‘মেরি ম্যাডাম’।
মঙ্গলবার ঠিক কী হয়েছিল?
বিজেপির নবান্ন অভিযানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের (পিটিএস) সামনে শুভেন্দুর গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। সেইসময় শুভেন্দুর পাশে ছিলেন ডিসি (সাউথ) আকাশ মেঘারিয়ার নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সদস্য মেরি। তাঁকে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার গায়ে হাত দেবেন না। কেন আমার গায়ে হাত দিচ্ছেন?’ উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তাদের ডাকতে বলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা।
ভিড়ের মধ্যে শুভেন্দুর কাছে আসেন ডিসি (সাউথ) মেঘারিয়া। শুভেন্দুকে তিনি বলেন, ‘পুলিশে আবার মহিলা-পুরুষ কী! আমাদের বাহিনীতে নারী এবং পুরুষের মধ্যে ভাগ হয় না।’ যদিও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন শুভেন্দু। মেরিকে উদ্দেশ্যে করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি। আই অ্যাম মেল।’ যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘টাচ’ মিমের বন্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্কও অব্যাহত।
সেই পরিস্থিতিতে একেবারে অন্তরালে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছেন মেরি। তাঁর ফোন বন্ধ আছে। একটি মহলের দাবি, ‘টাচ’ বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে বারণ করে উপতরতলা থেকে নির্দেশ এসেছে। তাই সম্ভবত প্রচারের আড়ালে থাকছেন ‘মেরি ম্যাডাম’। তবে মেরির সহকর্মীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার শুভেন্দুকে ‘টাচ’ করে কোনও ভুল করেননি কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর। এমন কোনও আইন নেই, যেখান বলা হয়েছে যে কোনও পুরুষকে আটক বা গ্রেফতারির ক্ষেত্রে মহিলা পুলিশকর্মী যেতে পারবেন না। অর্থাৎ কোনও পুরুষের গায়ে ‘টাচ’ করার ক্ষেত্রে মহিলা পুলিশকর্মীদের কোনও আইনি বাধা বলে যুক্তি দিয়েছেন ‘মেরি ম্যাডাম’-এর সহকর্মীরা।
যদিও পুলিশের যুক্তি মানতে নারাজ বিজেপি। প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের দাবি, পুরুষকে স্পর্শ করতেই পারেন মহিলা পুলিশকর্মী। যেমন, কোনও অপরাধী যদি পালিয়ে যায়, তাকে মহিলা পুলিশকর্মী পাকড়াও করতে পারেন। কিন্তু শুভেন্দু তো কোনও দাগী অপরাধী নন। তিনি যাতে নবান্ন অভিযানে যোগ দিতে না পারেন, তাই আটক করা হচ্ছিল। ফলে পুলিশের যুক্তি মোটেও ধোপে টিকছে না। সেইসঙ্গে তাঁর দাবি, পিটিএসের সামনে তো প্রচুর পুরুষ পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁদের পাঠানো হল না কেন?
অভিষেক এবং শুভেন্দুর রাজনৈতিক তরজা
শুভেন্দুর 'ডোন্ট টাচ মি' মন্তব্য নিয়ে বুধবার কটাক্ষ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি খোঁচা দেন, শুভেন্দু শুধু পুরুষ পছন্দ করা নেতা। সুদীপ্ত সেন যদি মহিলা হতেন, তাহলে টাকা নিতেন না শুভেন্দু। নারদকাণ্ডে স্যামুয়েল ম্যাথুর পরিবর্তে অ্যাঞ্জেলিনা স্যামুয়েলস গেলে টাকা নিতেন না পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা।
অভিষেকের খোঁচার পালটা দিয়েছেন শুভেন্দুও। তাঁর দাবি, মহিলা পুলিশ দিয়ে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তাতে পা দেননি বলেই 'ভাইপোর' রাগ হয়েছে বলে পালটা কটাক্ষ করেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক।