রাজ্যপাল-রাজ্য সংঘাত নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছায় সোমবার। নবান্নে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম ছিল হাওয়ালা-জৈন মামলার চার্জশিটে। এরপরে সন্ধ্যায় রাজ্যপাল সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন তাঁর নাম চার্জশিটে ছিল না। তবে অভিযুক্ত ছিলেন অজিত পাঁজা, যশবন্ত সিনহারা। যদিও পরে তাঁরাও বেকসুর খালাশ হয়েছিলেন। তবে এরপর থেকেই ৩০ বছর আগের সেই জৈন ডায়েরি মামলা নিয়ে কৌতুহল বেড়েছে মানুষের মনে।
কী সেই ‘হাওয়ালা-জৈন’ মামলা? কার কার নাম ছিল সেই ডায়েরিতে? ১৯৯১ সালে কাশ্মীর থেকে এক হিজবুল জঙ্গিকে ধরা হয়েছিল। আশফাক হুসেন লোন নামক সেই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে হাওয়ালার মাধ্যমেই টাকা আসত ওই জঙ্গি সংগঠনের হাতে। আশফাক জানায়, সেই টাকা আসত সুরেন্দ্র কুমার জৈন নামক এখ শিল্পপতির কাছ থেকে। এই হাওয়ালায় জৈনের আত্মীয়রাও জড়িত ছিল বলে জানা যায়। আশফাকের সেই বয়ানের ভিত্তিতেই তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। খোঁজ মেলে জৈনের দুটি ডায়েরি আর দুটি নোটবুক। কবে, কাকে, কত টাকা দিয়েছেন, তা তাতে লিখে রেখেছিলেন জৈন। আর সেই তালিকা ছিল বিস্ফোরক।
তদন্তকারীরা দেখতে পায় যে ৪২ জন হেভিওয়েট রাজনীতিবিদের নাম রয়েছে সেই ডায়েরিতে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত একাধিক নেতাকে মোট ৫২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে গোয়েন্দারা স্বীকার করেছিলেন, যে হয়ত শিল্পপতি এসকে জৈন গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে ওই ডায়রি সাজিয়ে রেখেছিলেন।
জৈনের ডায়েরিতে যেসকল রাজনীতিবিদের নাম ছিল, তাঁদের মধ্যে অন্য়তম হলেন : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন সিং, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী দেবী লাল, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনডি তিওয়ারি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নটবর সিং, বর্তমানে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান।
উল্লেখ্য, জেরার মুখে জৈন দাবি করেছিল যে সে রাজীব গান্ধীকেও টাকা দিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন সতীশ শর্মার হাত দিয়ে এই টাকা রাজীবের পকেটে চালান দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন জৈন। যার বদলে রাজীব গান্ধী তাঁকে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প পেতে সাহায্য করেছিলেন। জৈনের ডায়েরিতে আরজি-২০০ বলে একটি লেখা ছিল। তদন্তকারী আধিকারিকদের মতে, রাজীব গান্ধীকে ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথার উল্লেখ সেটি।
এদিকে অভিযুক্তরা কেউই স্বীকার করেননি টাকা নেওয়ার বিষয়ে। তাছাড়া টাকা নেওয়ার প্রমাণও মেলেনি। তবে এই মামলায় সিবিআইকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এই সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশনও দাখিল হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। সেখানে অভিযোগ উঠেছিল যে অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের ইশারায় সিবিআই অফিসারদের বদলি হয়। পরে সেই মামলা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
আর ৩০ বছর পর সেই মামলার কথাই তুলে আনেন মমতা। যার জবাব দিয়েছেন রাজ্যপালও। সোমবার রাজ্যপাল বলেন, ‘অজিত পাঁজার নাম ছিল হাওয়ালার চার্জশিটে। যশবন্ত সিনহার নামও ছিল। কিন্তু আপনাদের রাজ্যপালের নাম ছিল না। আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই।’