শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লি নয়, বাধ্যতামূলক চূড়ান্ত বর্ষ বা সেমেস্টার পরীক্ষা নেওয়ার বিপক্ষে মুখ খুলেছে একাধিক রাজ্য। প্রত্যেক রাজ্যের তরফেই একই বক্তব্য, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই পরীক্ষা নেওয়া একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
কোন কোন রাজ্যগুলি সেই বাধ্যতামূলক পরীক্ষার করেছে, দেখে নিন একনজরে -
পশ্চিমবঙ্গ
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষ বা সেমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশিকা প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তরফে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পড়ুয়া এবং শিক্ষক মহলের শয়ে শয়ে ইমেল পাচ্ছি। সেজন্য বিষয়টি আপনার কার্যালয়ের নজরে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি।’
দিল্লি
দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া শনিবার জানান, দিল্লি সরকারের অধীনস্থ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোনও পরীক্ষা হবে না। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট (অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন) বা পূর্ববর্তী সেমেস্টারের ভিত্তিতে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।’ কিছুক্ষণ পর মোদীকে চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল 'পড়ুয়াদের বৃহত্তর স্বার্থ'-এ দিল্লি-সহ দেশের সব কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাতিলের আর্জি জানান।
পঞ্জাব
ইউজিসির নির্দেশিকায় মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি লিখেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। ফাইনাল টার্মের পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ করে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ২৯ এপ্রিলের নির্দেশিকায় ইউজিসি জানিয়েছিল, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রতিটি রাজ্য বা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সেই নির্দেশিকা ফিরিয়ে আনা হোক।
ওড়িশা
বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ ও উন্নয়ন মন্ত্রকে চিঠি পাঠিয়েছে ওড়িশাও। উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে ফাইনাল টার্ম পরীক্ষা বাধ্যতামূলক না করার আর্জি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ওড়িশা সরকার পরীক্ষা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
রাজস্থান
গত ৪ জুলাই চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা করেছিল রাজস্থান সরকার। এখন কংগ্রেস সরকার জানিয়েছে, রাজ্য়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত গ্রহণ করা হবে।
মহারাষ্ট্র
দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি সবথেকে ভয়াবহ। এই অবস্থায় সব কোর্সের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী উদয় সামন্ত জানিয়েছেন, পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসির যে নির্দেশিকা, তা পরামর্শমূলক হওয়া উচিত, বাধ্যতামূলক নয়।
তামিলনাড়ু
অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভবপর নয়। এমনই জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী কে পলানিস্বামী। পাশাপাশি তিনি জানান, অনেক ভিন রাজ্য এবং বিদেশি পড়ুয়া রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়বেন।
শিক্ষা মহলের মতে, বিজেপি শাসিত থেকে পরীক্ষা নিয়ে যে আপত্তি উঠবে না, তা জানা কথা। কিন্তু বিরোধী রাজ্যগুলি যে যুক্তিতে পরীক্ষা বাতিলের আর্জি জানিয়েছে, তা মোটেও অগ্রাহ্য করার মতো নয়। রাজ্যগুলির ব্যবস্থাপনা ছাড়া পরীক্ষা আয়োজন সম্ভবও নয়। পাশাপাশি আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। তার আগে রাজ্যের আর্জি উপেক্ষা করে একতরফা পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ দিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পক্ষে। সেক্ষেত্রে এখন পরীক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বল কেন্দ্রের কোর্টেই আছে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।