‘আব তেরেকো নেহি খিলায়েঙ্গে’ - তিনি ‘আর না খেলালেও’ পুদুচেরির পেসার গৌরব যাদবের ফিনিক্স পাখির মতো উত্থানের সাক্ষী থাকলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। যে গৌরব পুদুচেরির হয়ে রঞ্জি ট্রফির প্রথম ম্যাচে দিল্লিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর ১০টি উইকেটের এতটাই মাহাত্ম্য ছিল যে এক ম্যাচ পরেই দিল্লির রঞ্জি দলের অধিনায়কত্ব থেকে বরখাস্ত হয়েছেন যশ ধুল। অথচ পুদুচেরির হয়ে খেলারই কথা ছিল না মধ্যপ্রদেশের ছেলে গৌরবের। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন কোচ তথা কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হেড কোচ পণ্ডিতের কারণে তিনি নিজের রাজ্য ছেড়ে পুদুচেরিতে খেলতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ৩২ বছরের পেসার। তাঁর দাবি, ভালো খেলার পরও তাঁকে প্রথম একাদশে রাখেননি পণ্ডিত। সরাসরি বলেছিলেন যে ‘এবার তোকে খেলাব না।’ আর পেশাদারি কেরিয়ারের সেই কালো অধ্যায়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কেকেআর তথা মধ্যপ্রদেশেরই তারকা বেঙ্কটেশ আইয়ার। তাঁর মধ্যস্থতায় পুদুচেরিতে যোগ দেন। আর তারপর বাকি যেটা হয়েছে, সেটা একটা রূপকথার গল্পের থেকে নেহাত কিছু কম নয়।
আর সত্যিই তো রূপকথা। খাতায়কলমে পুদুচেরির থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী দিল্লিকে নাকানিচোবানি খাইয়ে দেন গৌরব। শীতের সকালে নয়াদিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের উত্তাপ বাড়িয়ে দেন। দিল্লির বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ২৬.৫ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে সাত উইকেট নেন। তার ফলে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় দিল্লি। যেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি ধুলরা। দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা ছন্দে ফেরার আশা করলেও গৌরবরা সেটা সফল হতে দেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি উইকেট নেন তিনি। তার জেরে ১৪৫ রানে অল-আউট হয়ে যায় দিল্লি। আর সবমিলিয়ে নয় উইকেটে পুদুচেরি ম্যাচ জিতে যায়।
অথচ গৌরবের সেই দুর্দান্ত বোলিংয়ের সুবিধা পেতে পারত মধ্যপ্রদেশ। আর সেটা কেন পায়নি, তা নিয়ে ম্যাচের মধ্যেই মুখ খোলেন গৌরব। যিনি ২০১৯-২০ সালের বিজয় হাজারে ট্রফিতে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হয়েছিলেন। মাত্র ন'টি ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৩টি উইকেট। মধ্যপ্রদেশ যে বছর রঞ্জি জিতেছিল, সেই বছরও ভালো ছন্দে ছিলেন। কিন্তু পণ্ডিতের অবিচারের কারণে তাঁকে পুদুচেরিতে যোগ দিতে হয় বলে দাবি করেন গৌরব।
দিল্লির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের খেলার শেষে সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮-এ গৌরব বলেন, ‘আমি এই বছরেই (পুদুচেরিতে) এসেছি। ওখানে (মধ্যপ্রদেশ) সাদা বলে বেশি সুযোগ পাচ্ছিলাম না আমি। গত বছর আমি ১৫ জনের দলে ছিলাম। কিন্তু ম্যাচের ঠিক আগে আমায় ষোড়শ খেলোয়াড় করে দেওয়া হল। আর পুরো মরশুমে আমি ষোড়শ খেলোয়াড় হিসেবে থেকে গিয়েছিলাম। কোচ সে মেরা সাহি নেহি চল রাহা থা, তো ম্যাঁয়নে ইধার আনে কা ডিসিশন লে লিয়া (কোচের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না, তাই আমি এখানে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিই)। ’
আর সেটার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে পণ্ডিতের অপর ছাত্র আইয়ারের। যিনি দক্ষিণ ভারতের পুদুচেরির সঙ্গে মধ্য ভারতের রাজ্যের মেলবন্ধন করে দেন। ওই সংবাদমাধ্যমে গৌরব বলেন, 'আমি ওদের (পুদুচেরির) বিরুদ্ধে আগে খেলেছিলাম। তাই আমি জানতাম যে ওদের পেস বোলিংয়ের মান বাড়ানো গেলেই ওরা কোয়ালিফিকেশনের কাছে চলে আসবে। এখানে খেলার জন্য ওদের দ্বারস্থ হই। আসলে আমার হয়ে বেঙ্কটেশ আইয়ার ওদের সঙ্গে কথা বলেছিল। আমার বিষয়ে ওদের বলেছিল ও। ওরা ততদিনে আমার খেলা দেখে ফেলেছিল এবং তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গিয়েছিল।'
কিন্তু যে রাজ্যে নিজের জন্ম, সেই রাজ্য ছেড়ে অন্য কোথাও খেলতে ভালো লাগে? গৌরব বলেন, ‘নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও খেলার সিদ্ধান্তটা মোটেও সহজ নয়। আমরা ভালো খেলছিলাম। (২০২২ সালের রঞ্জি ট্রফিতে) চ্যাম্পিয়ন দল ছিলাম। ওই মরশুমে পেসারদের মধ্যে আমি সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলাম। ফাইনালে আমি ছয় উইকেট নিয়েছিলাম। (কিন্তু) চন্দু স্যার আমায় সরাসরি বলতে যে আব তেরেকো নেহি খিলায়েঙ্গে (এবার তোকে খেলাব না)।’
আর তখন তো দুটোই বিকল্প থাকে - হাল ছেড়ে দেওয়া, হার মেনে নেওয়া অথবা ফিনিক্স পাখির মতো নিজের উত্থানের জন্য লড়াই করা। আর দ্বিতীয় বিকল্পটাই বেছে নিয়েছেন ফিনিক্স পাখি গৌরব।