ভারতের অফ-স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রাজকোট টেস্টের সময়ে তাঁর মায়ের অসুস্থতা এবং ম্যাচের মাঝপথেই বাড়ি ফিরে যাওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনে, তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলার পরে অশ্বিন তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে মায়ের খবর শুনে চোখের জল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সেই সময়ে তাঁর সতীর্থরা, বিশেষ করে অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ তাঁকে তাঁর অসুস্থ মায়ের পাশে থাকতে সাহায্য করেছিলেন বলে জানিয়েছেন অশ্বিন।
রাজকোট টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরেই অশ্বিন চেন্নাইতে উড়ে গিয়েছিলেন তাঁর মায়ের পাশে থাকার জন্য। অশ্বিন যখন রাজকোটে ৫০০ উইকেটের মাইলস্টোন স্পর্শ করেন, তখন তাঁর মা হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ। চেন্নাইয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য অশ্বিন টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিন খেলতে পারেননি। তবে তিনি চতুর্থ দিনই দলের সঙ্গে যোগ দেন। অশ্বিন একটি চার্টার্ড বিমানে চেন্নাই উড়ে গিয়েছিলেন। অশ্বিনের এক সময়ের জাতীয় দলের সতীর্থ এবং কাছের বন্ধু চেতেশ্বর পূজারা এই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আবার চার্টার্ড প্লেনেই তিনি রাজকোটে ফিরে আসেন, যেটি জয় শাহ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
অশ্বিন বলেছেন যে, রোহিত শর্মা এবং প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসার আগে টিম হোটেলে তিনি অসহায় ভাবে বসেছিলেন। অফ-স্পিনার বলেছেন যে, তৃতীয় টেস্টের মাঝপথে দল ছেড়ে যাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন তিনি। অধিনায়ক রোহিতই তাঁর সব চিন্তা দূর করে দিয়েছিলেন। তাঁকে বাড়িতে যেতে এবং তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে রাজি করিয়েছিলেন। অশ্বিন যোগ করেছেন যে, রোহিত দলের একজন ফিজিয়োকে অশ্বিনের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছিলেন।
অশ্বিন মঙ্গলবার তাঁর ইউটিউব শো-তে দাবি করেছেন, ‘আমার ৫০০তম উইকেট পাওয়ার পর, আমি আমার বাবা-মা এবং আমার স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যে ৭টা বেজে যাওয়ার পরেও কারও কোনও ফোন আসেনি। আমার একটু অদ্ভুত লেগেছিল। তবে আমি ভেবেছিলাম, হয়তো ওরা আমার ৫০০ উইকেটের জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছে। বা সকলে অভিনন্দন জানাচ্ছে, সেই নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমি স্নান করতে যাওয়ার আগে আমার স্ত্রীকে ফোন করি। আমার বাবা-মা ফোন ধরেনি। এবং আমি শুনতে পেলাম, আমার স্ত্রীর কন্ঠস্বর ভাঙা। আমার স্ত্রী আমাকে আমার সতীর্থদের থেকে দূরে সরে যেতে বলে এবং তার পর জানায়, অসম্ভব মাথার যন্ত্রণা হওয়ার পর আমার মা কোলাপস করে গিয়েছে।’
সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘আমার নিজেকে তখন অসহায় মনে হচ্ছিল। সবটা কেমন শূন্য হয়ে গিয়েছিল। আমি কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব, তা আমি জানতাম না। আমি কী জিজ্ঞেস করব, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। আমি কাঁদছিলাম, কিন্তু আমি চাইনি, আমার চোখের জল কেউ দেখুক। আমি আমার ঘরে একা বসে বসেই কাঁদছিলাম।’
আরও পড়ুন: ধোনির পরবর্তী কে? অধিনায়ক নিয়েও নাকি সিদ্ধান্ত নেবেন মাহিই- দাবি CSK-এর CEO-র
না থেকে অশ্বিন বলে চলেছিলেন, ‘কয়েক মিনিট এই ভাবে কাটার পর, আমার স্ত্রী কোনও উত্তর না পেয়ে, টিমের ফিজিয়োকে আমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছিল। এর পর মনে হয়, ফিজিয়ো নিশ্চয়ই রোহিত শর্মা এবং রাহুল দ্রাবিড়কে সবটা বলেছিল। আমি ওদের কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমি ভাবছিলাম যে, একাদশে রয়েছি, এখন আমি যদি মাঝপথে চলে যাই, দল ১০ জনের হয়ে যাবে। সিরিজটি তখন ১-১ ছিল। আমি ভাবছিলাম যে, চলে গেলে ভারতীয় দলে একজন বোলার কমে যাবে।’
সেই সময়ে রোহিত এসে ভরসা জোগায়। অশ্বিন বলেন, ‘রোহিত এবং রাহুল ভাই আমার রুমে আসে। রোহিত আমাকে ভাবতে দেখে বলে, তুমি কি ভাবছ? শুধু তোমার ব্যাগ গুছিয়ে এখন চলে যাও। ও আমাকে বলেছিল যে, ও চেষ্টা করবে, আমার জন্য একটা চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার। চেতেশ্বর পূজারাকে অনেক ধন্যবাদ। ও অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলেছে এবং চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। আমাদের দলের ফিজিয়ো কমলেশ আমার ভালো বন্ধু। রোহিত যা করেছে, তা অসাধারণ। কমলেশকে আমার সঙ্গে চেন্নাইয়ের ফ্লাইটে উঠে পড়তে বলেছিল কমলেশকে। আমি রোহিতকে বলেছিলাম যে, কমলেশ দলের সঙ্গে থাকা দু'জন ফিজিয়োর মধ্যে একজন এবং ও কী ভাবে ওকে আমার সঙ্গে পাঠাচ্ছো? দল যখন গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট খেলছে। রোহিত বলেছিল, ঠিক আছে। কিন্তু আমি কমলেশকে বলেছিলাম দলের সঙ্গে থাকতে। যাইহোক, যখন আমি লবিতে গেলাম, কমলেশ এবং একজন নিরাপত্তাকর্মী সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। কমলেশকে বারবার ফোন করে রোহিত আমার বিষয়ে সব সময়ে খোঁজখবর নিয়ে গিয়েছে।’
অশ্বিন আরও যোগ করেছেন, ‘আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি রোহিতের কাছ থেকে এমন আচরণ কল্পনাও করতে পারিনি। আমি যদি অধিনায়ক হতাম, তবে আমি সেই অবস্থানে থাকা কাউকেই বাড়ি যেতে বলতাম। এতে দ্বিতীয় বার ভাবার কিছু নেই। কিন্তু আমার সব সময়ের খবর রাখার জন্য সমানে ফোন করে যাওয়াটা সত্যিই অন্য বিষয়। কমলেশকেও আমার সঙ্গ দিতে বলছে। অবিশ্বাস্য! আমি রোহিত শর্মার মধ্যে একজন অসামান্য নেতা দেখছি। ও আলাদা কিছু। এত দয়ালু হৃদয়ের জন্য, ও ৫টি আইপিএল শিরোপা সহ এত সাফল্য পেয়েছে। আমি আশা করি, রোহিত আরও বড় কিছু অর্জন করবে। এমন স্বার্থপর সমাজে একজন মানুষ যে অন্যের মঙ্গল নিয়ে চিন্তা করে, সে তো বিরল। রোহিত শর্মা সেই লোক।’