রাখে হরি মারে কে! মঙ্গলবার ওয়াংখেড়েতে প্রচলিত বাংলা প্রবাদের প্রতিটি অক্ষর যথার্থ প্রমাণিত হয়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ম্যাচে ২১টি চার ও ১০টি ছক্কার সাহায্যে ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রান করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আফগানিস্তানের ৫ উইকেটে ২৯১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া একসময় ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। সেখান থেকে ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবিক ইনিংস ম্যাচ জেতায় অজিদের। অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে ২৯৩ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায়।
সুতরাং, ম্যাক্সওয়েল একার হাতে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জিতিয়েছেন বলা মোটেও ভুল হবেন না। তবে রেকর্ড বইয়ে যেটা লেখা থাকবে না সেটা হল, এমন দুর্দান্ত ইনিংসের পথে ২ বার সহজ জীবনদান পান ম্যাক্সওয়েল। একবার আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পরে ম্যাক্সওয়েল সাজঘরের পথে হাঁটাও লাগিয়েছিলেন। তবে রিভিউয়ে আম্পায়ারকে নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় শেষমেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসের নবম ওভারের প্রথম ২টি বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাই পরপর আউট করেন ডেভিড ওয়ার্নার ও জোশ ইংলিসকে। হ্যাটট্রিক বলে ব্যাট করতে নামেন ম্যাক্সওয়েল। প্রথম বলেই তাঁর বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ-র আবেদন জানায় আফগানিস্তান। তবে বল ব্যাটের কানা ছোঁয়ায় ক্রিজে এসেই মাঠ ছাড়তে হয়নি গ্লেনকে।
ইনিংসের ২০.১ ওভারে রশিদ খানের বলে স্লগ সুইপ মারার চেষ্টা করেন ম্যাক্সওয়েল। বল ব্যাটের উপরের কানা নিয়ে হাওয়ায় ভেসে যায়। কভার থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরার চেষ্টা করেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। তবে তিনি শরীর ছুঁড়েও একহাতে ক্যাচ ধরতে পারেননি। ম্যাক্সওয়েল তখন ২৪ রানে ব্যাট করছিলেন।
পরে ২২.১ ওভারে নূর আহমেদের বলে ম্যাক্সওয়েলকে এলবিডব্লি আউট দেন আম্পায়ার। গ্লেন রিভিউ নিলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। টেলিভিশন রিপ্লেতে বল ব্যাটের কানা ছোঁয়নি দেখেই ম্যাক্সওয়েল সাজঘরের পথে হাঁটা লাগান। তবে বল ট্র্যাকারে দেখা যায় যে, বল স্টাম্পে লাগছিল না। ফলে আম্পায়ারকে তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। গ্লেন হাসি মুখে ক্রিজে ফেরেন পুনরায়। সেই সময় ম্যাক্সওয়েল ব্যাট করছিলেন ব্যক্তিগত ২৭ রানে।
নূর আহমেদের সেই ওভারেই মুজিব উর রহমানের হাত থেকে অতি সহজ জীবনদান পান ম্যাক্সওয়েল। ২১.৫ ওভারে নূরের বলে শর্ট ফাইন-লেগে মুজিব যে ক্যাচটি মিস করেন, স্কুল পর্যায়ের ফিল্ডাররাও এমন ভুল করবেন বলে মনে হয় না। ম্যাক্সওয়েল সময় ৩৩ রানে ব্যাট করছিলেন। গ্লেন তখন আউট হলে অস্ট্রেলিয়া ১১২ রানে ৮ উইকেট হারাত।
মুজিবের হাত থেকে জীবনদান পাওয়ার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাননি ম্যাক্সওয়েল। ভাগ্য সঙ্গে রয়েছে বুঝেই নির্ভয়ে ব্যাট চালাতে শুরু করেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস।