বছরদুয়েক আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর সেনাপতি। এবার অবশ্য সেরকম কিছু জুটল না। তবে এখনও পশ্চিমবঙ্গে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর না হওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ শানালেন নরেন্দ্র মোদী।
বছর চারেক আগে থেকেই সপ্তম পে কমিশনের আওতায় বেতন পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীরা এখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশন আওতায় পড়ে আছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে রবিবার হলদিয়ার রাজনৈতিক সভায় মোদী বলেন, ‘সপ্তম বেতন কমিশনও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে লাগু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনও লাগু হয়নি। এমনকী আমায় তো বলা হয়েছে যে এখানকার সরকার তো নিজেদের কর্মচারীদেরও সময় মতো বেতন দিতে পারছে না।’
যদিও মোদীর বেতন না দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মমতা। মঙ্গলবার কালনার জনসভা থেকে তিনি বলেন, ‘কখনও শুনেছেন প্রধানমন্ত্রীরা মিথ্যে কথা বলেন, কখনও শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রীরা মিথ্যে কথা বলেন। কখনও শুনেছেন, বড় রাজনৈতিক নেতারা মিথ্যে কথা বলেন। আরে প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছেন, সরকারি কর্মচারীরা নাকি মাইনে পান না। এবার কী উদ্ভট কথাবার্তা। কোন সরকারি কর্মচারী মাইনে পাননি? দেখান মোদীবাবু। আর আপনি বিএসএনএল বিক্রি করে দিয়েছেন, সেল বিক্রি করে দিচ্ছেন, রেলের বেসরকারিকরণ করে দিচ্ছেন। এলআইসি বিক্রি করে দিচ্ছেন।’
তবে সরকারি কর্মীদের মন জয়ের কৌশল বিজেপির কাছে নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে মালদহের হবিবপুরের জনসভা থেকে অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছিলেন, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলেই মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করা হবে। বকেয়া মহার্ঘভাতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেই কৌশলের ফায়দাও পেয়েছিল বিজেপি। পোস্টাল ব্যালটের নিরিখে গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৩৯ টি আসনে এগিয়েছিল গেরুয়া শিবির। একটি করে আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস, বাম এবং কংগ্রেস। সেই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে মোদী মোক্ষম ‘ক্ষত’ খুঁচিয়ে ঘা করতে চেয়েছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
এমনিতেই মহার্ঘভাতা (ডিএ) এবং বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ২০১৬ সালের জুনেই সপ্তম বেতন কমিশনে ছাড়পত্র দিয়েছিল মোদী সরকার। সেই পথে হেঁটে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গোয়া, মধ্যপ্রদেশের সরকারি কর্মচারীরাও সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশন কার্যকর হয়নি। দীর্ঘ টালবাহানার পর গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন পেতে শুরু করেন বঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা। সেই সময় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতার ফারাকও ক্রমশ চওড়া হয়েছে। রাজ্যের কোষাগারে টাকা নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার দাবি করলেও তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বরং ক্ষোভের আঁচ পেয়ে গত বছর মমতা ঘোষণা করেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই তিন শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। করোনাভাইরাস কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা প্রদান স্থগিত রাখলেও ভোটের আগে মমতার সেই ঘোষণায় অবশ্য ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি।