রাত পোহালেই পশ্চিমবঙ্গের ৪ পৌরনিগমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট হবে শিলিগুড়ি, আসানসোল, চন্দননগর এবং বিধাননগর পৌরসভায়। জানুয়ারি মাসেই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের জেরে শাসক শিবির এবং বিরোধী শিবির উভয়েই ভোট পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। অতঃপর দুই শিবিরের দাবিতেই শীলমোহর দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। পিছিয়ে যায় ভোট। সেই নির্বাচনই হওয়ার কথা আগামিকাল। ৪ পৌরনিগমের মধ্যে রয়েছে আসানসোল পৌরনিগমও। এই পৌরনিগমে মোট ১০৬টি ওয়ার্ড রয়েছে। পাঁচজন সাধারণ পর্যবেক্ষক ও দু’জন বিশেষ পর্যবেক্ষকের নজরদারিতে ভোটগ্রহণ হবে আসানসোলে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসানসোলের মোট ১১৮২টি বুথে বুথে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরাও।
আসানসোল পুরভোটে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে যোগ্য ভোটার সংখ্যা ৯ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৮। তাঁরাই কাল ভাগ্য নির্ধারণ করবেন মোট ৪৩১ জন প্রার্থীর। তৃণমূল কংগ্রেস সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। এদিকে বিজেপি প্রার্থী দিতে পেরেছে ১০২টি আসনে। বামফ্রন্ট ১০৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেস ৫২টি আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। তাছাড়া ৬২ জন নির্দল প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আসানসোল পুরভোটে।
আসানসোলের মোট ৪৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে যে হেভিওয়েট প্রার্থীদের দিকে নজর থাকবে, সেই তালিকার শীর্ষেই রয়েছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা তথা আসানসোল পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী চৈলাতি তিওয়ারী। তিনি বিজেপির টিকিটে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন এবারের ভোটে। এদিকে বিদায়ী পুর প্রশাসক অমর নাথ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের টিকিটে লডছেন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তাছাড়া ভোটময়দানে দেখা যাবে মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটককে। তিনি তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এদিকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই টিকিট পেয়েছেন অভিজিৎ আচার্য এবং ইন্দ্রানী আচার্য। আচার্য দম্পতি লড়ছেন ১০২ ও ১০৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। এদিকে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তাবাসুম আরা তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে এবার নির্দল হিসেবে লড়ছেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে আসানসোল পৌরনিগম এলাকার অন্তর্গত ১০৬টি ওয়ার্ডের ৬৬টিতে এগিয়ে তৃণমূল। এই পৌরনিগমের অন্তর্গত তিনটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে দু’টিতেই জিতেছিল বিজেপি। কুলটি থেকে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন ডঃ অজয় পোদ্দার। অপরদিকে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য আসানসোল উত্তরে নিজের আসন ধরে রাখতে সক্ষম হন গত নির্বাচনে। যদিও ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রের অধিকাংশে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তাই এই পুরভোটে তৃণমূল-বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আশা করা হচ্ছে।
যে প্রত্যাশাগুলি পূরণের আশা করে আগামীকাল আসানসোলবাসীরা ভোট দেবেন তার মধ্যে অন্যতম হল আসানসোলের নিকাশী ব্যবস্থা। তাছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা এখনও রয়েছে বলে অভিযোগ। এদিকে আসানসোল পৌরনিগম হলেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় এখনও মানুষের বাড়িতে শৌচালয় নেই। খোলা স্থানেই সৌচকর্ম সারতে যেতে হয় সাধারণ মানুষকে। এদিকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে মোটের উপর বহু মানুষেরই দাবি, বিগত দিনে অনেক কাজ হয়েছে আসানসোল জুড়ে। এই আবহে এই উন্নয়নের কৃতিত্ব নিতে চাইবেন প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। আবার তৃণমূলও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের মডেল তুলে ধরে ভোট পাবে বলে আশা করছে। এই আবহে আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আসানসোলের মানুষের মনোভাব ফুটে উঠতে শুরু করবে ইভিএমে।